আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
লিবারেল পার্টিকে ১২ বছর নেতৃত্ব দেওয়ার পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) তিনি এই ঘোষণা দেন।
ট্রুডোর পদত্যাগের পরই কানাডায় উত্তরাধিকার নির্বাচনের লড়াইয় শুরু হয়েছে। লিবারেল পার্টির কয়েকজন বিশিষ্ট মুখ তার উত্তরাধিকার হওয়ার লড়াইয়ে নামতে পারেন বলে আলোচনা চলছে।
কানাডার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হাউস অব কমন্সের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে যিনি লিবারেল পার্টির প্রধান হবেন, দেশটির প্রধানমন্ত্রীও হবেন তিনিই। এ হিসেবে জাস্টিন ট্রুডোর পর যিনি দলটির প্রধানের দায়িত্ব নেবেন, তিনিই নির্বাচনের আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যিনি ট্রুডোর উত্তরসূরি হবেন, তিনিই কনজারভেটিভ পার্টি এবং দলটির নেতা পিয়ের পলিয়েভরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দলটিকে নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে যাবেন। নির্বাচন উপলক্ষে চালানো বিভিন্ন জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন পিয়ের পলিয়েভর। অক্টোবরের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন শেষ করতে হবে। নির্বাচনের অনেক আগেই হাউস অব কমন্সের ভোটে নতুন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বিদ্যমান সরকার ভেঙে দেওয়া হতে পারে।
জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, সদস্যদের ভোটে লিবারেল পার্টি তার উত্তরসূরি বাছাই করবে। যদিও এখন পর্যন্ত কেউ ট্রুডোর উত্তরসূরি হওয়ার জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। তবে এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম আলোচনায় এসেছে।
কানাডার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড গত মাসে পদত্যাগ করার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। তিনি লিবারেল পার্টির নেতা হওয়ার জন্য প্রার্থিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টরন্টোয় দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইলের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হিসেবে কানাডায় সফল ক্যারিয়ার ছিল ক্রিস্টিয়া। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সাংবাদিক হিসেবে এবং দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের নিউজরুমে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ক্রিস্টিয়া কানাডার আলবার্তা অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। তিনি ট্রুডোর লিবারেল পার্টিতে যোগ দিতে ২০১৩ সালে কানাডায় ফিরে আসেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বিনোদন বিভাগের এক সাংবাদিককে বিয়ে করেছেন এই রাজনীতিক। লিবারেল পার্টি কানাডার ক্ষমতায় আসার পর তিনি ট্রুডো প্রশাসনের জন্য বেশ কিছু বড় ইস্যু সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
গতকাল সোমবার ট্রুডো ক্রিস্টিয়ার প্রশংসা করলেও তাদের মধ্যে যা ঘটেছিল, তা নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। ক্রিস্টিয়ার পদত্যাগের নেপথ্যের ঘটনা সম্পর্কে যারা জানেন তারা বলেছেন, এক ভিডিও কলে ক্রিস্টিয়াকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং তাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রিত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেন ট্রুডো। কিন্তু ক্রিস্টিয়া ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
ডমিনিক লেব্ল্যাঁ
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করার পর কানাডার অর্থমন্ত্রী হন ডমিনিক লেব্ল্যাঁ। তিনি জাস্টিন ট্রুডোর দীর্ঘদিনের বন্ধু। অটোয়ায় ট্রুডো ও তার ভাইদের দেখাশোনা করতেন ডমিনিক। সে সময় থেকেই তারা একে অপরকে চেনেন। তারা দুজনই দুজনের বাবার শেষকৃত্যে কফিন কাঁধে নিয়েছিলেন। জাস্টিন ট্রুডোর বাবা পিয়ের ইলিয়ট ট্রুডো একসময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর ডমিনিকের বাবা রোমিও লেব্ল্যাঁ ছিলেন তার প্রেস সচিব। পরে তিনি কানাডার গভর্নর হন। এরপর তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের প্রতিনিধি হিসেবে হেড অব স্টেট নিযুক্ত হন।
ডমিনিক লেব্ল্যাঁ ২০০০ সালে প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ট্রুডোর প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি জননিরাপত্তামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ডমিনিকের জন্ম কানাডার নিউ ব্রান্সউইক অঙ্গরাজ্যে। তিনি ২০১২ সালে লিবারেল পার্টির নেতা হওয়ার জন্য প্রার্থিতার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ট্রুডো যখন তাকে একই ইচ্ছার কথা বলেন, তখন তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
মেলানি জলি
কানাডার শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে ২০২১ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন মেলেনি জলি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে লেনি জলিকে উৎসাহিত করেছিলেন ট্রুডো। যদিও এ ব্যাপারে শুরুতে দ্বিধায় ছিলেন জলি। কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি কিছু চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছিলেন। তিনি কানাডা থেকে ছয় ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিলেন। চীন ও ভারতের আনা বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ মোকাবিলা করতে হয়েছিল তাকে।
মার্ক কার্নি ছিলেন ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর। তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে গোপনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ট্রুডো ও তাঁর দল। মার্ক কার্নি ও ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড দীর্ঘদিনের বন্ধু।
ট্রুডোর সঙ্গে ক্রিস্টিয়ার প্রকাশ্য বিবাদ এবং মন্ত্রিসভা থেকে তার পদত্যাগের পর কার্নির সঙ্গে ট্রুডোর যোগাযোগের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর পর থেকে কার্নি দলের নেতৃত্বের জন্য লড়বেন কি না, এ ব্যাপারে লিবারেল পার্টির পার্লামেন্ট সদস্যদের সমর্থন ও পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : জাস্টিন ট্রুডো কানাডা
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh