তিনি ফিরলেন এবং অধিনায়ক হিসেবেই। প্রথমবারের চেয়েও প্রবল প্রতিপত্তি নিয়ে। চার বছরের ‘শাসন-বিরতি’র পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবার আসীন হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৭৮ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতা ২০ জানুয়ারি ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। শপথ নেওয়ার পর দেওয়া প্রথম বক্তব্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ শুরু হলো। তার নেতৃত্বে শান্তি ও ঐক্যের দূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আরো সমৃদ্ধ হবে, আরো সম্মানিত হবে।
ইউএস ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের শপথের আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জেডি ভ্যান্স। এই অনুষ্ঠানে প্রযুক্তি ধনকুবের, ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য নেতারা ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টরা এবং বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বিদায়ি ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প ও পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর প্রথম বক্তব্যে বিশেষ করে বাইডেনের অভিবাসন নীতির কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এই দুর্বল নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মনে সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে গেছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোসহ বেশ কিছু কট্টর নির্বাহী আদেশে সই করছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা যুদ্ধসহ বাইডেনের গৃহীত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতি তিনি সমূলে পাল্টে ফেলছেন। বিবিসি এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলেছে, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের আবহে এরই মধ্যে বদলে গেছে বিশ্বের অনেক অঙ্ক।
ট্রাম্পের সমালোচক ও বিরোধী শিবিরের দাবি, এবার ট্রাম্প একনায়ক হিসেবে দেশ শাসন করবেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে খর্ব করতে পারেন। এদিকে ইঙ্গিত করে বাইডেনও দেশবাসীকে সতর্ক করে গেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র চরম হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে, কারণ দেশে গোষ্ঠীতন্ত্রের উত্থান হচ্ছে।
কিন্তু নভেম্বরের ভোটে ভিন্ন চিত্র প্রত্যক্ষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি বিশ্ব। পপুলার ভোট ও ইলেকটোরাল কলেজ- দুই ক্ষেত্রেই প্রথমবারের চেয়ে ট্রাম্প এবার বেশি ভোট পেয়েছেন। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতেও এবার তিনি বাজিমাত করেছেন। ফলে তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের সবুজ সংকেত তিনি ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটারদের কাছ থেকে পেয়ে গেছেন। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে উল্লেখ করেছে, ট্রাম্প যুদ্ধ থামিয়ে বন্ধু বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। তবে তিনি তার সমালোচকদের কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনতে সব রকম চেষ্টা করতে পারেন।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ধনকুবের ট্রাম্প। পপুলার ভোটে হিলারি ৩০ লাখ ভোটে এগিয়ে থাকলেও ইলেকটোরাল কলেজের হিসাবে হেরে যান। ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে যান প্রবীণ অভিজ্ঞ ডেমোক্র্যাট নেতা বাইডেনের কাছে। তবে তিনি ওই ফল প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তখনই তিনি বলেছিলেন, আবার হোয়াইট হাউসে তিনি ফিরবেন, ফিরবেনই।
২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথমে দাঁড়ালেও দলের দাতা ও নেতাদের অব্যাহত চাপের মুখে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন বাইডেন।
বদলি প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান দেশটির প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। কিন্তু তিনিও হিলারির মতোই দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে হেরে যান। ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা ও গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা করে নিচ্ছেন মার্কো রুবিও, স্কট ব্যাসেন্ট, হওয়ার্ড লাটনিক, পাম বন্ডি, রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র, পিট হেগসেথ, ডগ বারগাম, লিন্ডা ম্যাকমোহন, ইলন মাস্ক প্রমুখ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh