আড্ডা থেকে ‘কপালকুণ্ডলা’

‘তুমি অধম- তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইবো কেন?’ এই উক্তিটি শোনেনি এমন বইপড়ুয়া বোধহয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল, বাংলা ভাষার পাঠককুল নিশ্চয়ই জানেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত এই উক্তি। যিনি কমলাকান্ত- ছদ্মনামে লিখতেন। আধুনিক বাংলা উপন্যাসে সাহিত্যের জনকও তিনি। কপালকুণ্ডলা ১৮৬৬ সালে রচিত হয়। সেই সময়ে উপন্যাসটি সমালোচক মহলে উচ্চ-প্রশংসাও পায়। কারও কারও মতে, বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাসও এটি। এই উপন্যাস লেখার পেছনে রয়েছে মজার এক আড্ডার কাহিনি। কপালকুণ্ডলার জন্ম-কথা জানাচ্ছেন শোয়াইব আহম্মেদ...

বঙ্কিমচন্দ্র তখন খুলনায় বদলি। আড্ডাপ্রিয় বঙ্কিমের খুলনার বাড়িতে একদিন আড্ডায় মেতেছেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র ও শচীশ চট্টোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে। সাম্প্রতিক সাহিত্য প্রসঙ্গ নিয়ে চলছে তুমুল আলাপ-আলোচনা। আলোচনার এক পর্যায়ে বঙ্কিমচন্দ্র বাকি সবার উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন, ‘বলো দেখি, যদি শৈশব থেকে ষোলোবছর পর্যন্ত  কোনো স্ত্রীলোক কাপালিকের দ্বারা বনের মধ্যে সমুদ্রতীরে পালিত হয় এবং কাপালিক ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মানুষের মুখ দেখতে না পায়, সমাজের সব কিছু যদি তার অজানা থেকে যায়, পরবর্তীকালে যদি দৈবক্রমে কেউ তাকে বিবাহ করে সমাজে নিয়ে আসে, তবে তার কী রূপ অবস্থা হবে বলে তোমাদের মনে হয়?’

এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে সবাই মাথা চুলকাতে লাগলেন। ভাবলেন- এ আবার কেমন প্রশ্ন! কিন্তু রসিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন, যদি মেয়েটির বিবাহ হলো একটি গরিবের বাড়িতে, তাহলে মেয়েটি নির্ঘাত চোর হবে। কারণ খুব পরিষ্কার, বনে-জঙ্গলে সে ভালো খেতে পরতে পারত না। সমাজে ভালো ভালো খাবার দেখে তার লোভ হওয়া স্বাভাবিক। গরিবের ঘরে খেতে না পেলে সে চুরিবিদ্যাই শিখবে। শুধু খাবার নয়, সাজপোশাক করার জন্য সে গয়নাও চুরি করতে পারে!’

এমন উত্তর শুনে বাকিরা হো হো করে হেসে উঠলেন। বঙ্কিমচন্দ্রও বেশ মজা পেলেন। তবে এই উত্তর তার খুব একটা পছন্দ হলো না। উল্লেখ্য, এ ঘটনার কিছু পরেই বঙ্কিমচন্দ্র তার অমর সৃষ্টি ‘কপালকুণ্ডলা’ রচনা করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //