করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় গণকমিটি

দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৪৭ নাগরিক গণকমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার (৪ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন আহ্বান জানান তারা।

নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু, জাফর হোসেন, আব্দুল আলী, সন্তোষ গুপ্ত, সরোয়ার মুর্শেদ, ইমাম গাজ্জালী, মাসুদ খান, হাসান ফকরী, বি ডি রহমতউল্লাহ, আকমল হোসেন, এ এস এম কামাল উদ্দিন, ম. আখতারুজ্জামান, ম. নুরুন্নবী, ফয়েজ হোসেন, শিবলুল বারী রাজু, মোদাচ্ছের বাবুল, শওকত হোসেন আহমেদ, রাজা মিয়া, নজরুল ইসলাম, মুনির মোরশেদ, তন্ময় সান্যাল, আব্দুর রব,  শিপলু রহমান, আনিস রায়হান, কুয়াশা চৌধুরী, আরাফাত আরা, আরিফুজ্জামান তুহিন, আব্দুল্লাহ মাহফুজ অভি, গোলাম মুর্শেদ, ইরফানুর রহমান রাফিন, শাহেরীন আরাফাত, আতিফ অনিক, অনুপ সাদী, লাবণী মণ্ডল, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল গফুর, আবু ইউসুফ, অভিজিৎ রায়, বাদল শাহআলম, ফয়সাল আহমেদ, আহমেদ সোহেল, রামু মাঝি, সালমা রহমান শুভ্রা, শারমিন রহমান, নিলয় চৌধুরী, নাসিমা নাজনীন, মোজাম্মেল হক শিশির প্রমুখ ৪৭জন নাগরিকের যুক্ত আহ্বান-

করোনাদুর্যোগ মোকাবিলায় গণকমিটি গঠন করুন

করোনাদুর্যোগ মহামারির মধ্যে জনগণের দুর্দশা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অথচ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সরকার অতিধনীদের পুঁজি বাঁচাতে মরিয়া। আর জনগণকে রক্ষার বিষয়ে তাদের বাগাড়ম্বর ও অমনোযোগিতাই দৃশ্যমান। সাম্রাজ্যবাদ এবং অতিধনীদের কাছে জনগণকে রক্ষার আবদার করা ও বোকার স্বর্গে বাস করা যে এক জিনিস- তা শাসক ধনী শ্রেণীর প্রতিটি পদক্ষেপ আরো স্পষ্ট করে তুলছে।

সুতরাং, কভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য আজ মেহনতি জনগণের ব্যাপক ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। ক্ষমতাসীন কিংবা ক্ষমতাবহির্ভূত গণবিরোধী শাসকশ্রেণীর সাথে ঐক্য নয়, বরং শাসক শ্রেণী ও সরকারের বিরুদ্ধে নিপীড়িত ও বঞ্চিত জনগণের ঐক্য। শাসকদের ভ্রান্তি, সীমাবদ্ধতা, অন্যায় ও অপরাধগুলো জনগণের সামনে ধৈর্য্যসহকারে তুলে ধরা দরকার। মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ আজ ধূমায়িত হয়ে উঠছে, তাকে ভাষা দিতে প্রগতিশীল শক্তিসমুহের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা দরকার।

রাষ্ট্রের জনবল ও সম্পদ নিয়োগ ছাড়া এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে কেবল জনগণের নিজের চেষ্টায় করোনা সংক্রমণ ঠেকানো, জনগণের স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সুতরাং, রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সেবা আদায় করে নেয়ার জন্য সকলের সোচ্চার হওয়াই এখন একমাত্র বাঁচার পথ। এ জন্য বঞ্চিত জনগণকে সরাসরি নিজের দাবিগুলো স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে জানাতে হবে। এবং প্রাপ্য আদায় করতে সক্ষম হতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে প্রাপ্য আদায় করতে গেলে উল্টো সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সুতরাং সংকটগ্রস্থ জনগণকে এ উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ করাই হলো সাফল্যের প্রথম শর্ত।

এ শর্ত পূরণের জন্য গ্রাম/ পাড়া/ ওয়ার্ড পর্যায়ে বিবেকবান স্বেচ্ছাসেবী ও সংকটগ্রস্ত তরুণদের নিয়ে একটি করে গণসেবী টিম গঠন করতে হবে। গণসেবীরা তাদের এলাকার অভুক্ত, সংকটাপন্ন ও বেকার হয়ে পড়া শ্রমজীবী পরিবারের বিস্তারিত তালিকা তৈরি করবে। তাদের নিয়ে ত্রাণ ও অন্যান্য প্রাপ্য নিশ্চিত করাসহ করোনা সংকট মোকাবিলার স্বার্থে গণকমিটি গঠন করবে।

গণকমিটি ও তার গণসেবীরা নিচের কাজগুলো হাতে নেবে

১। ত্রাণ ও সাহায্য

গণকমিটির নেতৃবৃন্দসহ গণসেবীরা সঠিক তালিকা অনুসারে ত্রাণ ও অন্যান্য সাহায্য আদায়ে উপজেলা বা থানা পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি পেশ করবে। জরুরি ক্ষেত্রে সরকারি ত্রাণ না পেলে বেসরকারি ত্রাণের জন্য যোগযোগ করবে।

২। স্বাস্থ্যসেবা

ক. শারীরিক দূরত্ব রক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। বিশেষত উৎপাদনকালে যেন সবাই তা মেনে চলেন- সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া। জামাতে নামাজের প্রবণতা থাকলে সে বিষয়ে মিশরীয় ফতোয়া সম্পর্কে অবগত করা। বিদেশ ও বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য উদ্যোগ নেয়া ইত্যাদি।

খ. করোনার লক্ষণসম্পন্ন রোগীকে আইসোলেশনে নেয়া। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবগত করা ও ব্যবস্থা নেয়া। টেস্ট, হাসপাতালে ভর্তি ও দরিদ্রদের চিকিৎসার ব্যয় তদারক করা। 

গ. কেউ অসুস্থ হলে অনলাইন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা দেয়া। জরুরি ওষুধ সংরক্ষণ করা। সদরে/হাসপাতালে যাওয়ার মত জরুরি পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি রাখা, দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা আদায় ইত্যাদি। 

৩. অনিয়ম বন্ধ করা

কিস্তি আদায়, পক্ষপাতযুক্ত তালিকা, ত্রাণ চুরি, মজুদদারি বন্ধে প্রশাসনকে অবহিত করা ইত্যাদি।

৪. করোনা মোকাবিলায় জনগণের দাবিগুলো তুলে ধরা

ফসলের বিপনন, ব্যাংকঋণ প্রাপ্তি, প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা, গ্রাম ও শহরের শ্রমজীবীদের সুরক্ষায় সুষম খাদ্যের নিশ্চয়তা, শ্রমিকের মজুরি, লে-অফ, ছাঁটাই বন্ধ; ক্ষুদে ব্যবসায়ী, ছোট কারখানা মালিকদের আর্থিক প্রণোদনা, শহর ও শ্রমিক অঞ্চলে কর্মহীনদের বাড়ি/ঘর ভাড়া মওকুফ, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা; উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত টেস্ট, অস্থায়ী করোনা হাসপাতাল/বেড, মেডিকেল সরঞ্জাম, রোগী পরিবহন, ওষুধ আইসিইউসহ বিনামূল্যে সেবা, দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে সাধারণ চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি দাবির পক্ষে জনমত তৈরি ও সোচ্চার হওয়া। ছাত্রদের বেতন ফি মওকুফ করা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলো অবিলম্বে গ্রহণ ও ফল প্রকাশের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা ইত্যাদি। 

এ প্রাথমিক কমিটিগুলোকে সমন্বয় করার জন্য উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গড়ে তুলতে হবে।

আমরা দেশের প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক দল, সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ, বিশেষত তরুণদের এ কাজে সাহসের সাথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। করোনায় সংকটাপন্ন শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারবারি, পেশাজীবী সকলের প্রতি আহ্বান, সরকারের কাছ থেকে স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা আদায়ের লক্ষ্যে গণকমিটি গড়ে তুলুন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //