দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক মেরুকরণ

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারত। বৃহৎ প্রতিবেশী হিসেবে পার্শ্ববর্তী অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের চড়াই-উৎরাই রয়েছে। তবে এ নিয়ে সাম্প্রতিককালে ভারত খুব একটা স্বস্তিকর অবস্থায় নেই। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্রমাবনতির কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতি ইঙ্গিত করছেন।

গত সপ্তাহব্যাপী রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা এ ফোনালাপকে দু’দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে কেবল সৌজন্য বিনিময় নয়, বরং দেখছেন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে। বিশেষ করে যখন বিগত বছর পাঁচেক ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক মোটেও ভালো যাচ্ছিল না। ঠিক তখন শেখ হাসিনা এবং ইমরান খানের মধ্যে ফোনালাপ বিশ্লেষকদের মাঝে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারতের সঙ্গে তার প্রতিবেশীদের সম্পর্কের সমীকরণ কি তাহলে নতুন মাত্রা পাচ্ছে?

সমুদ্র সীমানাহীন রাষ্ট্র নেপাল বহুকাল ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল; কিন্তু রাজতন্ত্রের পতনের পর দেশটির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের নাক গলানোকে তারা আর ভালো চোখে দেখছে না। ভুটানের ওপর ভারতের প্রভাবও কমছে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক দু’দেশের জন্মের পর থেকেই বৈরী। মালদ্বীপে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থমকে গেছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক খুব প্রীতিকর নয়। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, একতরফা বাজার বিস্তার, সীমান্ত হত্যা, রোহিঙ্গা সংকট, নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও স্থিতিশীল নয়।

ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতার সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে চীন। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর প্রতি বাড়িয়ে দিচ্ছে বন্ধুত্বের হাত। চীনের লক্ষ্য আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নয়, শক্তিধর বৈশ্বিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করা। যদিও চীনের সঙ্গে ভারতের চলমান উত্তেজনাকর সম্পর্ককে আন্তর্জাতিক নয় বরং দুই আঞ্চলিক পরাশক্তির লড়াই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। 

ভারত ও চীন এ দু’দেশই আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে চীনের কূটনৈতিক চালে ভারত এ মুহূর্তে কিছুটা পিছিয়েই পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এ রাজনৈতিক মেরুকরণে বাংলাদেশ অংশীদার বা সুবিধাভোগী কোনোটিই নয়। তাই বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দিকে ঝোঁক না বাড়িয়ে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টায় মনোযোগী হওয়া। ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ‘বহুপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনে’র সমীকরণটি মাথায় রেখে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে ভূমিকা পালনই হবে কৌশলী পদক্ষেপ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //