পেঁয়াজের বাজার স্থায়ীভাবে স্থিতিশীল করতে প্রয়োজন উৎপাদন বৃদ্ধি

গত বছরের মতো এবারো পেঁয়াজের বাজার তেজি হয়ে উঠেছে। সাধারণ ক্রেতাদের পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। বাংলাদেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদার পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ টন। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব মতে, বাংলাদেশ বছরে ১৭ থেকে ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করে, যা দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। বাকি ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

বাংলাদেশে আমদানিকৃত পেঁয়াজের ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। বাদ বাকি আসে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক, চীন অথবা পাকিস্তান থেকে। ভারতের পরিবর্তে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলে খরচ বেশি হয়। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশকে বিপাকে পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে তখন বেশি দামে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ অমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ফলে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যায়।

সম্প্রতি ভারত কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই আকস্মিক বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। গত বছরও একই ঘটনা ঘটেছিল। অবশ্য গত বছর ভারত আগাম ঘোষণা দিয়েই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এরই ফাঁকে অসাধু ব্যবসায়ীরা চাহিদা ও জোগানের দোহাই দিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছিল পেঁয়াজের দাম।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি ‘শাঁখের করাত’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি সাশ্রয়ী হলেও, অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিগত বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের সেই বাস্তবতাই স্মরণ করিয়ে দেয়। কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই আকস্মিক পণ্য রফতানি বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা বিশ্বে বিরল। দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলে সাধারণত এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই দিক থেকে বিবেচনায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বৈরী তো নয়ই বরং বন্ধুত্বপূর্ণ। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করার আগেই দুর্গা পূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রফতানি করা হয়।

পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাংলাদেশের তরফ থেকে দেন-দরবারও করা হয়েছে। তবু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ফলে বাংলাদেশকে বিকল্প বাজার থেকে আমদানির কথা ভাবতে হচ্ছে; কিন্তু ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ২০-২১ আর অন্য দেশ থেকে আনতে খরচ পড়ে প্রায় ৩২-৩৫ টাকা। যে কোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একটি দেশের প্রতি নির্ভরশীল না থেকে বিকল্প বাজার থাকা প্রয়োজন। তবে পেঁয়াজের বাজার স্থায়ীভাবে স্থিতিশীল করতে প্রয়োজন উৎপাদন বৃদ্ধি। বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে ভালো ও উন্নত বীজের সরবরাহ, সংরক্ষণের জন্য পৃথক কোল্ড স্টোরেজ তৈরি ও দেশীয় পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা দরকার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //