ভারতের জ্বালানি রাজধানী ও কয়লাচাপা মানুষ

কয়লা খনি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ভারতের অভিজ্ঞতা বহু দিনের। সুতরাং তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, তার লাভক্ষতি জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে অনেক উন্মুক্ত খনি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখতে আমরা গিয়েছিলাম সেদেশে। মূলত সেই অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ নিয়েই এ লেখা...

বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারি লোকজনের মুখে শুনি দু’দেশের বন্ধুত্ব এখন এক ‘অনন্য উচ্চতা’য় উঠেছে। ভারতের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সরকারের সর্বশক্তি নিয়োগই এই ‘বন্ধুত্বের’ প্রমাণ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সঠিকভাবেই বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, ভারত সেটা সারাজীবন মনে রাখবে। তবে এ জন্য আমি ভারতের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না।’ (প্রথম আলো, ৩১ মে ২০১৮) তার কারণে দুই দেশের সরকারের মধ্যে যতটা সংহতি আছে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে তা গড়ে ওঠতে দেওয়া হয়নি কখনোই। বাংলাদেশে নদী, ট্রানজিট, সীমান্ত হত্যা, সুন্দরবন, ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে ভারত কী করছে, তা সেখানকার মানুষ কমই জানে। ভারতের সব টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে দেখা গেলেও ভারতে বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল দেখা যায় না। তাছাড়া সেখানকার মিডিয়ায় বাংলাদেশের খবরাখবর যা প্রকাশিত হয়, তাতে শুধু অসম্পূর্ণ নয় ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই ভারতের অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশকে দেখে। সে জন্য আমরা দেখি বাংলাদেশে ভারতের কোম্পানির সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রায় দশ বছর ধরে এত আন্দোলন-কথাবার্তা চললেও, তা নিয়ে ভারতের মূলধারার মিডিয়ায় কোনো খবরই থাকে না।

২০১৭ সালের এপ্রিলে কলকাতায় এক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এর মূল বিষয়বস্তু ছিল কয়লা খনি ও কয়লা বিদ্যুতের নানাদিক। এই সম্মেলনের এক অধিবেশনে মূল বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেলাম, যা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল বাংলাদেশ ও ভারতে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রভাব বিষয়ে পর্যালোচনা করার জন্য। রাজি হলাম। এর আগের বছর কলকাতায় সুন্দরবন নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কনভেনশনের প্রাথমিক আলাপ হয়েছিল, তা চূড়ান্ত করাও আমার লক্ষ্য ছিল। ভিসার জন্য আবেদন করলাম। কিন্তু সম্মেলনের কয়েক দিন আগে কলকাতা থেকে উদ্যোক্তাদের বিপন্ন ইমেইল পেলাম। লিখলেন, তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন যোগাযোগ করে বলেছেন, সম্মেলনে রামপাল নিয়ে কোনো আলোচনা করা যাবে না। করলে পুরো সম্মেলন বাতিল হবে। ভারতের ভিসাও পেলাম না। প্রাণ-প্রকৃতি-মানুষের পক্ষে কথা বলায়, ভারতের বন্ধুদের সঙ্গে সংহতি তৈরির চেষ্টার কারণে সেই থেকে ভারতে প্রবেশাধিকার বন্ধ। 

কলকাতায় সমাবেশের পোস্টার। ছবি: অমৃতরাজ, ভারত

প্রবেশাধিকার বন্ধ হওয়ার আগের কয়েক বছরে আমি সুন্দরবনবিনাশী প্রকল্প নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার ভারত গেছি। সভা-সমাবেশ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। কলকাতা ও দিল্লিতে আলোচনা হয়েছে রাজনীতিবিদ, এমপি, লেখক, বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষকদের সঙ্গে। দেখেছি তথ্য জানার পর সেখানকার অনেক মানুষই এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা মিছিল-সভা করেছেন, স্মারকলিপি দিতে গিয়ে হেনস্তা হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশে এসে লংমার্চেও অংশ নিয়েছেন। ভারতের দিকে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ বাস করেন। তারাও এ প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন জেনে এর বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। আমরা সবসময় মনে করি যে, ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র যখন যৌথভাবে এই অঞ্চলের নদী-বন-প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশী নানা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তখন দুই দেশের মানুষদেরই ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। দু’দেশের মানুষের যৌথতা তৈরি হলে দু’দেশেই উন্নয়ন ও রাজনীতির নতুন ভাষা নির্মিত হবে।

কিন্তু একদিকে যখন ‘বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে’ বলে প্রচারণা চলে, তখন দুই দেশের জনগণের সংহতি বাধা দেওয়ার জন্য ভিসা অস্ত্র, নানারকম হুমকি, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। আসলে বিরোধ দুই দেশের মানুষের মধ্যে নয়, বিরোধ দু’দেশের শক্তিশালী করপোরেট স্বার্থের সঙ্গে দু’দেশের জনগণের। 

ভারতের বর্তমান বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ?
কয়লা খনি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ভারতের অভিজ্ঞতা বহুদিনের। সুতরাং তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, তার লাভক্ষতি জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে অনেক উন্মুক্ত খনি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখতে আমরা গিয়েছিলাম সেদেশে। আমার সঙ্গে আরও ছিলেন ফুলবাড়ী বিরামপুরের সংগঠক বন্ধুরা- সাইফুল ইসলাম জুয়েল, নূরুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, রামাই সরেন, বকুল, আমিনুল। আর ছিলেন সাংবাদিক শামীমা বিনতে রহমান। মূলত সেই অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ নিয়েই এই লেখা। 

ভারতের মতো বাংলাদেশে উন্মুক্ত খনি নেই, তবে এর জন্য দেশি-বিদেশি নানা অপতৎপরতা আছে। শতকরা ৬ ভাগ রয়্যালটির বিনিময়ে অনভিজ্ঞ একটি বিদেশি কোম্পানিকে উন্মুক্ত খনির মাধ্যমে শতকরা ৮০ ভাগ কয়লা রফতানি করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ফুলবাড়ীসহ ছয় থানায়। ২০০৫ সাল থেকে জনগণ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করেছিলেন, ২০০৬ সালে জীবন দিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সরকার বাধ্য হয়েছে এশিয়া এনার্জি বহিষ্কার ও উন্মুক্ত খনি নিষিদ্ধসহ ফুলবাড়ী চুক্তি সই করতে। চক্রান্ত থামেনি। কিন্তু যতবার অপচেষ্টা হয়েছে, ততবারই প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে- জনগণের শক্তিই এক ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকিয়েছে।

কিন্তু কোম্পানির অপকর্ম এখনো অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের সম্পদ ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে এশিয়া এনার্জি (জনপ্রতিরোধে নাম পাল্টে হয়েছে গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্ট) এখনো বেআইনিভাবে শুধু শেয়ার ব্যবসাই করছে না, বাংলাদেশের সম্পদ নিয়ে চীনা কোম্পানির সঙ্গে নতুন চুক্তিও করেছে সম্প্রতি। চীনা বিভিন্ন কোম্পানি এখন টাকার থলি আর সব বিষাক্ত প্রকল্প নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশে। অন্যদিকে, জার্মান কোম্পানি ফিশনার ঢাকায় আস্তানা গেড়েছে, সুন্দরবন বিনাশ করতে তারাও যোগ দিয়েছে ভারতের এনটিপিসির সঙ্গে।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সফরে কয়লা খনি ও কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফলে সৃষ্ট সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি দেখা ও বোঝার সুযোগ হয়। সেইসঙ্গে মানুষের অবস্থা দেখার সুযোগ হয়- যারা উচ্ছেদ হয়েছেন, বহু মানুষ বারবার উচ্ছেদ হয়েছেন, এর মধ্যে অনেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। উন্নয়নের নামে এসব প্রকল্প বিভিন্ন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর জন্য লাভজনক হয়েছে, রাষ্ট্রের উন্নয়ন সূচক বেড়েছে, এগুলো ঠিক। কিন্তু তা প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের ওপর কী প্রভাব ফেলেছে, অসংখ্য মানুষের জন্য পানি, জমি, কর্মসংস্থান, আইন-শৃঙ্খলা, জীবন-জীবিকা, শিক্ষা-চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তা দেখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছি। এই পরিদর্শন দরকার ছিল সরকার পরিকল্পিত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বোঝার জন্য। 

উন্নয়নের সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ : ‘কয়লা চোর’ না প্রতারিত কৃষক?
ঝাড়খণ্ডের রাঁচী থেকে ৪০/৫০ কিলোমিটার দূরে হাজারীবাগ। টাটা ও সিসিএলের উন্মুক্ত খনি দুটি পাশাপাশি। সিসিএল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হলেও বহুকাজেই ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে সাবকন্ট্রাক্ট দেওয়া আছে। তার ফলে বাস্তব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ব্যক্তি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানেরই ভূমিকা বেশি। তাদের লক্ষ্য থাকে যত খরচ কমানো যায়, আর যাতে লাভ বেশি বাড়ানো যায়। তাদের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে এলাকায় মানুষের জন্য উন্নয়নের যত প্রতিশ্রুতি ছিল তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। না মিলেছে কাজ, না শিক্ষা, না হাসপাতাল। প্রতিশ্রুতি ছিল হাসপাতাল, স্কুল, বাসাবাড়ি। ঘুরে ঘুরে দেখলাম হাসপাতালের অর্ধসমাপ্ত ভবন, যেখানে কোনোদিন ডাক্তার বসেনি। স্কুলেরও সেই অবস্থা, কোনোদিন সেখানে ক্লাস হয়নি। কাজের সুযোগ যা ছিল তাও এখন নেই। বিশুদ্ধ পানির উৎস এখন বিষাক্ত বলে পানের পানি নেই। আশ্রয় সবসময়ই ঝুঁকির মুখে। খনিতে দিনের মধ্যে কতবার বিস্ফোরণ হয়, তার কোনো সংখ্যা সীমা নির্দিষ্ট নেই। কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়েও বারবার বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আমাদেরও কেঁপে উঠতে হলো। লোকজন বললেন, কখনো কখনো একনাগাড়ে ২০/২৫ বারও বিস্ফোরণ হয়। এলাকার অধিবাসী মোহন ভূঁইয়া জানালেন, এসব বিস্ফোরণের কারণে পাশের গ্রামের বিভিন্নজনের বাড়ির ওপর পাথর ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়া ঘর দেখেছি উত্তর প্রদেশেও। 

পরিত্যক্ত খনির ধোঁয়ার মধ্যে। ছবি: অমৃতরাজ, ভারত

এসব এলাকার মানুষের জন্য তাই কাজ, ঘর, চিকিৎসা তো বটেই- এমনকি পানের পানিও দুর্লভ। বেশ কয়েক জায়গায় দেখলাম, খনি থেকে কয়লা উঠানো শেষ কিন্তু ভেতরে আগুন জ্বলছেই খনির বিভিন্ন এলাকা জুড়ে, ধোঁয়া বেরুচ্ছে। পুরো অঞ্চল জুড়ে আগ্নেয়গিরির চেহারা, বিষাক্ত চারপাশ। সেই ধোঁয়ার মধ্যে দেখি এক বছরের ভাইকে নিয়ে সাত/আট বছরের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, শীতের মধ্যে একটু শরীরে গরম নেওয়ার জন্য।

খনি এলাকায় তো বটেই- এর চারপাশের বহু অঞ্চলের আবাদি জমি শেষ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এলাকায় খনি হলে শিল্পায়ন হবে, কাজ বাড়বে, এটাই ছিল বরাবরের প্রচারণা। কিন্তু জমি গেছে, খনিতে আর কতজন কাজ পায়, শিল্পায়নও হয়নি। এলাকায় উন্মুক্ত খনির বিশাল বর্জ্য দিয়ে বিরাট বিরাট পাহাড় তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি আছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ছাইয়ের পুকুর। বর্জ্যরে পাহাড় আর পুকুরের মধ্যেই এই এলাকার হতভাগা মানুষদের বাস। পুরো শহরগুলোতেই খাবার পানি এক বড় সংকট। রোগা, অপুষ্ট, অনাহারী মানুষে ভরা কয়লা খনি আর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকাগুলো। আর এগুলো থেকে যাদের পকেট ভারী হচ্ছে, তাদের অট্টালিকা একটা দুটো। পুরো এলাকাতে ভাড়াটে সন্ত্রাসী আর পুলিশের দাপট। 

এক উন্মুক্ত খনির কাছে যেতেই দেখা হলো অনেক কয়লামাখা নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধের সঙ্গে। এলাকায় তাদের বর্তমান পরিচয় ‘কয়লা চোর’। অথচ তাদের মধ্যকার বয়স্করাই একসময়, মানে খনির জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণের আগে, এলাকায় কৃষিমজুর ছিলেন। এখন তারা পরের প্রজন্ম সঙ্গে নিয়ে কালিঝুলি মাখা একেকটি মূর্তি, সন্ত্রস্ত। এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে হাতে গোনা যে কয়জনের কৃষিজমি ছিল, তারা ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলে গেছে, জমিও চলে গেছে খনির মধ্যে। এতে করে যাদের জমি ছিল না সেই কৃষি ও দিনমজুরদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন শেষ হয়ে গেছে।

যাদের ‘কয়লা চোর’ বলা হয়। ছবি : অমৃতরাজ, ভারত

সেই খনিতে কাজ পেয়েছেন এলাকার মাত্র ৩৫ জন। বাকি অধিবাসীদের এখন প্রধান জীবিকা খনির পরিত্যক্ত অংশ বা পাহাড়সমান ওভারবার্ডেনের স্তূপ থেকে কয়লা সংগ্রহ করা, সেই কয়লা ধুয়ে পুড়িয়ে বাজার উপযোগী করা, তারপর সেই কয়লা ১৫/২০ কেজি করে একেকটা বস্তায় ভরে এরকম ৭/৮টি বস্তা সাইকেলের দু’পাশে বেঁধে পাহাড়ি রাস্তায় ঠেলতে ঠেলতে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা। আমরা যে কয়টি পাশাপাশি খনি দেখলাম সেখান থেকে যারা এরকম সাইকেল নিয়ে যাচ্ছেন তাদের গন্তব্য হাজারীবাগ বাজার অথবা রাঁচী। পাহাড়ী রাস্তা বলে সাইকেল চালানো যায় না, শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠেলে নিতে হয়।

কৃষি জমি শেষ হওয়ার পর একমাত্র জীবিকা। ছবি: অমৃতরাজ, ভারত

হাজারীবাগ তুলনামূলক কাছে, সেখানে গিয়ে বিক্রি করতে পারলে ৭/৮ ঘণ্টা সাইকেল ঠেলতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় যেতে হয় রাঁচী পর্যন্ত। তা আরও দূর, সেখানে সাইকেল ঠেলে নিয়ে যেতে কমপক্ষে দু’দিন লাগে। এই কাজে যুক্ত হলে রাত-দিন, গ্রীষ্ম-বর্ষা কোনোকিছু গুরুত্ব দেওয়ার উপায় নেই। এই রাস্তায় সকালে রাঁচী থেকে কয়লা খনি যাওয়ার সময়, আবার রাতে রাঁচীতে ফেরার সময় পাহাড়ী রাস্তায় বোঝাভর্তি সাইকেল ঠেলা মানুষের অবিরাম প্রবাহ দেখলাম। ফেরার সময় অন্ধকার ছিল, বৃষ্টিও হচ্ছিল, কিন্তু তার মধ্যে রাস্তায় সাইকেলের কোনো কমতি ছিল না। ওদের কাছ থেকেই জানলাম, কেউ যদি পথেই কাহিল বা অচল হয়ে না যায়, শেষ পর্যন্ত সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে রাঁচী পর্যন্ত পৌছাতে পারলে আয় হবে সাইকেল প্রতি বড়জোর ৩০০ বা ৪০০ রূপী। দেখতে দেখতে মনে হলো এরকম বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে, না খেয়ে না ঘুমিয়ে পৌঁছে এই সামান্য টাকা হাতে পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য কতো খরচ হবে? অসুখে তাঁদের চিকিৎসা না করারই সমূহ সম্ভাবনা। সেক্ষেত্রে শরীর কয়দিন চলবে? আয়ু কতদিন থাকবে?

সিংগ্রলি: শক্তিনগর বা এনার্জি ক্যাপিটাল
উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশের সীমান্তের এপার ওপারজুড়ে যে জেলা তার নাম ‘সিংগ্রলি’। এই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে ‘শক্তিনগর’, এই অঞ্চলকেই বলা হয় ভারতের ‘এনার্জি ক্যাপিটাল’।

সেখানে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি বা এনটিপিসির বড় বড় প্রকল্প। এনটিপিসি বাংলাদেশে এখন একটি পরিচিত নাম, এই প্রতিষ্ঠানই রামপালে সুন্দরবনবিনাশী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রধান কর্তা। দাবি করা হয়- এনটিপিসির এই প্রকল্পে কোনো দূষণ হবে না, সুন্দরবন আরও ভালো থাকবে, সবাই সুখে শান্তিতে থাকবে। সেই এনটিপিসির বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক তাপভিত্তিক কেন্দ্র এই সিংগ্রলি অঞ্চলেই, এর নাম ‘বিন্ধ্যাচল থারমাল পাওয়ার প্ল্যান্ট’। কী পরিণতি এই অঞ্চলের? 

বিষাক্ত ফ্লাই অ্যাশের পুকুর। এগুলো বাংলাদেশেও আমদানি হয় সিমেন্ট কারখানার জন্য। ছবি: অমৃতরাজ, ভারত

এক সিংগ্রলি জেলাতেই নয়টি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও ১১টি চালু খনি আছে। সিংগ্রলি শহরের ভেতরে, আশপাশে বেশ কয়েকটি উন্মুক্ত কয়লা খনি। শহরের বিভিন্ন দিকে তাকালে শুকনো পাহাড় চোখে পড়ে। প্রথমে পাহাড়ই ভেবেছিলাম, পরে জানলাম এগুলো প্রায় ৩০০ ফুট উচুঁ বর্জ্যরে গাদা। উন্মুক্ত খনি থেকে উঠেছে এগুলো। সাধারণ হিসাব হলো- এক টন কয়লা পেতে গেলে ২৫ টন বর্জ্য তুলতে হয়। কয়লা চলে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে। থেকে যায় এই বর্জ্য, আর থাকে ফ্লাই অ্যাশ বা বিষাক্ত ছাই। পানি আর বাতাসে থেকে যায় বাড়তি বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান। পুরো অঞ্চলেই তার চিহ্ন ছড়ানো।

বছর ত্রিশেক আগে এই অঞ্চলটি ছিল ঘন বনাঞ্চল। এখন গাছপালা হাতে গোনা যায়। পাহাড় আর বর্জ্যের মধ্যে দুটি একটি বেপরোয়া ধরনের গাছ আর কিছু একই ধরনের ছোট ছোট গুল্ম। ইট পাথরের মধ্যেও যে সবুজ উঁকি দেয়, এদের ধরন সেরকম। দেখে মনে হয়, কী অপ্রতিরোধ্য, বিষের মধ্যেও মাথা তোলে। বিশাল জলাধার দেখলাম, এমনিতে তাকালে পানি দেখার আরাম পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলোর আসল পরিস্থিতি জানলে আর সেই আরাম থাকে না। রিহান্ড নামের নদীতে বাঁধ দিয়ে এই জলাধার তৈরি করা হয়েছিল ৬০ দশকে। তখন নেহরু প্রধানমন্ত্রী, তার আমলে খুবই উচ্চাশা নিয়ে নির্মিত এই বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় ৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জলাধার। সে সময় এই বাঁধের কারণেই বেশ কয়েকটি গ্রাম উচ্ছেদ হয়েছিল। পরে আরেক দফা উচ্ছেদ হয়েছে কয়লা-উন্নয়ন করার কারণে।

জলাধার করার উদ্দেশ্য ছিল এলাকায় খাবার পানি জোগান দেওয়ার পাশাপাশি শিল্প কলকারখানার প্রয়োজন মেটানো। এরপর এই অঞ্চলে একে একে অনেকগুলো উন্মক্ত খনি করা হয়েছে, করা হয়েছে একাধিক বৃহৎ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। জলাধারের পানি সেসব কেন্দ্রে ব্যবহার হচ্ছে। আর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা পুড়িয়ে যে ফ্লাই অ্যাশ তৈরি হচ্ছে সেগুলো রাখার জন্য বানানো হয়েছে ছাইপুকুর। এলাকার মানুষ জানালেন বর্ষায় বহুবার সেই ছাইপুকুর উপচে জলাধারে পড়েছে আর তাতে এর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। তা এখন পান করার তো প্রশ্নই নেই, অন্যান্য কাজেও তা ব্যবহার অনুপযোগী। 

বিস্ময়ের ব্যাপার ‘এনার্জি ক্যাপিটাল’ বলে পরিচিত এলাকাতেও লোডশেডিংয়ের শিকার হলাম। শক্তিনগরের পাশের গ্রামেই লোডশেডিংয়ের কবলে পড়লাম, সেখান থেকে আলোকোজ্জ্বল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র দেখা যাচ্ছিল। বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বড় বড় শহরে। যে অঞ্চলের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে এসব বিদ্যুৎ কারখানা তারা এই বিদ্যুৎও পাচ্ছেন না সবাই। সেটাই ঘটে প্রতিশ্রুতি যা-ই থাকুক।

আগুন আর নিপীড়নের ভেতর মানুষ
ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া, হাজারিবাগ এবং উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের বেশ কয়েকটি উন্মুক্ত খনি এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি উচ্ছেদকৃত মানুষদের প্রায় ১০টি পুনর্বাসন বসতিতে গিয়েছিলাম। এর সবগুলোই খনির গা ঘেঁষে। বেশিরভাগ মানুষকে যেখানে স্থান দেওয়া হয়েছে সেগুলো নর্দমা বা বর্জ্যরে পাহাড়ের পাড়ে। আগেই বলেছি, খনিগুলোতে আগুন জ্বলছে ভেতরে। উপরে ধোঁয়া ২৪ ঘণ্টা, ৩০ দিন, ১২ মাস। তার পাশেই জনবসতি। ঠান্ডায় তাপ নিতে মানুষ ও পশু ওদিকেই এগিয়ে যায়। বিস্ফোরণে বড় বড় বর্জ্য উড়ে এসে পড়ে ওই জনবসতিতে। শ্বাস নেওয়া কষ্ট। শিশুদের খেলার স্থান নেই, চারদিকে বিষাক্ত পাথর, মাটি ও বিষাক্ত পানি। 

মধ্যপ্রদেশে আমাদের সঙ্গে ছিলেন অভিদেশ। এই প্রদেশের খনি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় অভিদেশ পরিবার নিয়ে বাস করেন ১৯৮৩ সাল থেকে। তাদের ওই অঞ্চলে আটকে রেখেছে এলাকার উচ্ছেদকৃত মানুষদের দুর্ভোগ ও লড়াই। এই মানুষদের পাশেই তিনি আছেন এত বছর। অভিদেশ বললেন, ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী গোটা ভারতে যে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন, তখনকার চেয়েও এই অঞ্চলের পরিস্থিতি বেশি কঠিন, জনগণের জন্য আরও বেশি নিপীড়নমূলক, নিরাপত্তাহীন। এই অঞ্চলে এতোদিন সবগুলো কয়লা প্রকল্প ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি ও কোল ইন্ডিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে। তখন জনগণের জন্য পুলিশই ছিল প্রধান সমস্যা, পরে ধীরে ধীরে সাবকন্ট্রাক্টরদের সংখ্যা যত বাড়তে থাকে ততই তাদের গুন্ডাবাহিনীও পুলিশের সঙ্গে যোগ হতে থাকে। উচ্ছেদ হওয়া বা নানা যন্ত্রণার শিকার দুর্বল মানুষদেরই এগুলো মোকাবেলা করতে হয়। আমাদের পরিদর্শনের সময় দেখলাম, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের পাশে পুরো কেন্দ্র বৃহৎ ব্যবসায়িক গ্রুপ রিলায়েন্সের। জানলাম- সন্ত্রাসী বাহিনীও অনেক বড়, সংগঠিত। ক্ষতিপূরণ, পানির সমস্যা, হাসপাতাল, শিক্ষা বা কাজ যেগুলো তাদের পাওনা- সেসব নিয়ে নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষেরা কথা বললে, প্রতিবাদ করলে বা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে শ্যেনদৃষ্টি পড়ে। প্রায়ই উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া বা মারপিটের কথা শোনা যায়।

উদ্বাস্তু মানুষদের সঙ্গে। ছবি: অমৃতরাজ, ভারত

মধ্যপ্রদেশের ঝরিয়া অঞ্চলটি এখন প্রায় পুরোটাই বর্জ্যরে নিচে চাপা পড়ে আছে। ২০০৬ সালে রিলায়েন্সের খনি চালু হওয়ার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জনসংখ্যা এখন এক-তৃতীয়াংশে দাঁড়িয়েছে। এখন পুরো এলাকাই ধোঁয়াটে। পানির সংকট এতোটাই যে, পানের জন্য বৃষ্টির পানির ওপরই বছরের কয়েকমাস নির্ভর করতে হয়। স্থানীয় হাসপাতালের ডাক্তারের মতে, খনি চালুর পর মৃত্যু ও অসুস্থতার হার বেড়েছে অনেক। অনেক শিশু জন্ম নিচ্ছে পঙ্গু হয়ে বা শরীরে স্থায়ী সমস্যা নিয়ে। হৃদরোগ ও এজমা ছাড়াও হাড়ে, মুখে, পাকস্থলীতে ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। জেলা হাসপাতাল আছে, কিন্তু তার অবস্থাও করুণ- প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি, ওষুধ কিছুই নেই। এলাকার অবস্থা এতই সঙ্গীন যে, ডাক্তাররাই এখানে থাকতে রাজি নন। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক জানান, ক্লাসে যে কয়জন শিশু আসে, তারা সারাক্ষণই অসুস্থ থাকে। অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিতির হারও বেশি।

কয়েক প্রজন্ম ধরে বারবার উচ্ছেদ হয়েছেন এরকম অনেকের সঙ্গে কথা হলো ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশে। এমনিতে কয়লা খনিতে কর্মসংস্থান খুব কম, বিদ্যুৎকেন্দ্রেও। তার ওপর এসব কাজে স্থানীয় লোকদের কাজে না নেওয়া মোটামুটি একটা অঘোষিত সিদ্ধান্ত। তার মানে- যারা বিভিন্ন খনি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের জমি ও ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তুলনায় আরও কম। শুধু তারা কাজ পান না তা-ই নয়, পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনীর নজরও তাদের দিকেই বেশি। একটু নড়াচড়া, একটু বৈঠক বা সভা, একটু প্রশ্ন বা অসন্তোষ দেখা গেলেই হয় পুলিশ এসে হাজির, নয়তো সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমণে পড়তে হয়। এর অর্থ হলো- উচ্ছেদকৃত মানুষদের নিয়ে কোম্পানি সবসময়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। যে কোনো সময় বিক্ষোভ-বিদ্রোহ হতে পারে। এর যথেষ্ট কারণ আছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে। প্রতিশ্রুতি ছিল- তাদের এমন কাজ দেওয়া হবে, যাতে পরিবারের আয় আরও বাড়বে, আগের চেয়ে উন্নততর বাসস্থান দেওয়া হবে। সন্তানের শিক্ষার জন্য উত্তম ব্যবস্থা থাকবে। চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকবে। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য নিশ্চিত করা হবে। এখন পানের পানি আনতে কোথাও কোথাও মেয়েদের কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয়। যারা জমির মালিক, তাদের সবাই না হলেও অধিকাংশ, বিশেষত বৃহৎ মালিকরা নির্ধারিত হারে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তারা আর এলাকায় নেই। গ্রামের বাকি গরীব মানুষদের পুনর্বাসন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট জায়গায় পরিবার প্রতি ৩০ বর্গফুট ঘরের জায়গা দেওয়া হয়েছে, কোথাও কোনোরকম একটা ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। 

আগেই বলেছি, উচ্ছেদ হওয়া প্রতারিত মানুষ, পানি আর স্বাস্থ্য সংকটে জর্জরিত মানুষদের কোনো নড়াচড়া দেখা গেলেই পুলিশ আর সন্ত্রাসীরা তৎপর হয়ে যায়। এনটিপিসির বৃহত্তম তাপভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এলাকা সিংগ্রলিতে এরই কিছুটা স্বাদ আমরাও পেয়েছি দুদিন। কিছুদিন আগেই গুম হয়েছেন সুদর্শন, এছাড়া শক্তিপ্রসাদকে দুদিন আগেই থানায় নিয়ে ভয়ংকর নির্যাতন করা হয়েছে। তারা গরীব, উচ্ছেদ হওয়ার পর মাথা গুজে থাকেন, মাঝেমধ্যে টিকতে না পেরে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে চেষ্টা করেন। সেটাই তাদের অপরাধ। 

পাহাড়ী কম জনবসতি এলাকাতেই ধ্বংস আর জীবনের যে কুৎসিৎ রূপ দেখলাম তাতে আমরা বাংলাদেশের মতো পানিসমৃদ্ধ, উর্বর জমি আর ঘনজনবসতি অঞ্চলে এই চিত্র আরও কতটা ভয়ঙ্কর হতো সেটা চিন্তা করতেও আতঙ্কবোধ করেছি। ফুলবাড়ীসহ ছয় থানার মানুষ লড়াই করে, জীবন দিয়ে কী ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন বাংলাদেশকে! সুন্দরবন সর্বনাশের মুখে। লুটেরা রাজনীতির আধিপত্যের কারণে এখনো লড়াই শেষ হয়নি। ভারতেও বিভিন্ন অঞ্চলে লড়াই চলছে। 

পুলিশের জেরা
সিংগ্রলির পাশের গ্রামে যখন আমরা এলাকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখনই খবর পেলাম একটু দূরে রাখা আমাদের নিয়ে আসা গাড়ি থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তখন সন্ধ্যা। খবর এলো, আমাদের থানায় যেতে হবে। স্থানীয় সংগঠকরা জানালেন, আমাদের থানায় যাওয়া ঠিক হবে না, ভাবসাবে মনে হয় গেলেই গ্রেফতার করবে। দুজন সংগঠক গেলেন থানায়। তাদের সঙ্গে অনেক তর্ক-বিতর্কের পর পুলিশ আমাদের হোটেলে ফেরার অনুমতি দিলো, তবে হোটেল থেকে বের হওয়া যাবে না। সকালে পুলিশের কর্মকর্তারা এসে কথা বলবেন, তারপর আমাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। হোটেলে ফিরে দেখলাম পুলিশ ঘিরে রেখেছে। অবরোধ অবস্থা। আমাদের সঙ্গে না থাকলেও হোটেল অবরোধ থাকার কারণে অন্যরাও বের হতে পারলেন না। গ্রিনপিসের সংগঠক জরুরি সভায় যাবেন, বের হতে পারলেন না। শুনলাম নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করায় তার নামে বেশ কয়টি মামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে। 

সকালে ডিএসপি, সিআইডি ইন্সপেক্টরসহ বেশ কয়েকজন ‘ইন্টারোগেট’ করতে এলেন। নেতৃত্বে ছিলেন একজন নারী কর্মকর্তা। আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে কপি করা হলো। কথা হলো অনেকক্ষণ। প্রথমদিকে গলার স্বর খুব কঠোর ছিল। কথা বলতে বলতে ক্রমে তা নরম হয়েছে। শেষটায় ছিল আন্তরিক সুর। আমার সঙ্গে প্রশ্নোত্তর যা হলো, তার বাংলা সারসংক্ষেপ এরকম- 

আপনারা এই এলাকায় অনুমতি ছাড়া কেন এসেছেন? 
এই এলাকায় আসার ক্ষেত্রে এ রকম কোনো নিষেধাজ্ঞার কথা আমাদের জানা ছিল না। এই এলাকা যেহেতু ভারতের এনার্জি ক্যাপিটাল, উন্নয়নের একটি বড় দৃষ্টান্ত, এই জায়গা তো পর্যটন এলাকা হওয়ার কথা। আপনাদের তো আরও দেশি-বিদেশি সবাইকে এখানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো উচিত। 

যা-ই হোক আপনারা কেন এসেছেন?
আমি অর্থশাস্ত্রের শিক্ষক। উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করি, লিখি। এখানে ভারতের বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের যে মডেল দেখছি তা উন্নয়নের একটি ধরন, আমার শিক্ষকতা ও গবেষণার বিষয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক। এই অঞ্চল পরিদর্শন করে শিক্ষকতায়, গবেষণায় এই অভিজ্ঞতা আমি আমার শিক্ষার্থী ও পাঠকসহ দেশের মানুষের কাছে আরও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবো। সেই আগ্রহ নিয়েই আমি এখানে এসেছি। আমার সঙ্গে আছেন বাংলাদেশের আরও কয়জন বন্ধু, যারা উন্মুক্ত খনির বিষয়টা বুঝতে এখানে এসেছেন- কেননা তাদের এলাকায় উন্মুক্ত খনির জন্য সরকার বহুদিন ধরে চেষ্টা করছে। 

বাংলাদেশের রামপালে কী হচ্ছে? (বুঝলাম আমাদের আটকানোর পেছনের আসল কারণ, রামপাল নিয়ে যে কোনো নড়াচড়াতেই ভীতি। সব খবরাখবর নিয়েই এই অবরোধ।) 

রামপালে আপনাদের এনটিপিসি একটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে। এর পাশেই বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, সুন্দরবন। আমাদের গবেষণা বলছে, এই কয়লা কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের অস্তিত্বই বিনাশ হবে, তাতে বাংলাদেশসহ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ অরক্ষিত হয়ে পড়বে। সেজন্য আমরা এর বিরোধিতা করছি। তবে কোম্পানি ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এনটিপিসির এই প্রকল্প কোনো দূষণ করবে না। কেউ কেউ বলছেন প্রকল্পে ব্যবহৃত পানি এতো বিশুদ্ধ হবে যে, তা পানও করা যাবে। এখানে এনটিপিসির বৃহত্তম প্রকল্প আছে, তাই তার অবস্থা সরাসরি দেখতে চেয়েছি আমরা।

তা কেমন দেখলেন, কী ধারণা হলো আপনাদের? 
ধারণা ভালো হলো না। পুরো অঞ্চল বাসের অনুপযোগী। বাইরে থেকে আনা খাবার আর বোতলের পানি ছাড়া উপায় নেই। বাতাসে শ্বাস নেওয়া কষ্ট। মানুষের জীবন ভয়াবহ।

(এবার আমিই প্রশ্ন করলাম) আমরা তো এখান থেকে চলে যাবো। এসব প্রকল্পের মালিক বা কর্তারাও এখানে থাকেন না, এলেও এসির মধ্যে থাকেন। আপনাদের তো সর্বক্ষণ থাকতে হয়, খোলা বাতাসে ঘুরতে হয়। আপনাদের অভিজ্ঞতা কী? কী মনে হয় এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে? 
(কিছুক্ষণ চুপ থেকে) এ ধরনের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা উচিৎ না।

 বর্জ্য পাহাড়ের পাশে পুনর্বাসন ঘর। ছবি: অমৃতরাজ, ভারত

বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা 
কয়দিন ধরে ঝাড়খণ্ড, উত্তর ও মধ্য প্রদেশে অনেকগুলো উন্মুক্ত খনি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সে অঞ্চলের অবস্থা দেখতে দেখতে বাংলাদেশের কথাই ভেবেছি আমরা, কথাও বলেছি। তুলনা করতে গিয়ে ভূতাত্ত্বিক গঠন, খনি মালিকানা ও কয়লা সম্পদের ব্যবহার বিষয়েও অনুসন্ধান করেছি। দেখেছি, আমাদের দেশের সঙ্গে এসব খনি অঞ্চলের পার্থক্য বহুরকম, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই পার্থক্য আকাশ-পাতাল। বাংলাদেশের মাটি নরম, আর এসব অঞ্চলের মাটি পাথুরে। বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ ভূগর্ভস্থ ও ভূউপরিস্থ পানিসম্পদ, এর কারণেই বাংলাদেশের জমি এতো উর্বর, এতো সবুজ। নদীনালা খালবিল অবলম্বন করেই অসংখ্য মানুষের জীবিকা। আর ভারতের এসব অঞ্চলের নীচে ও ওপরে দুই ক্ষেত্রেই পানিসম্পদ খুবই সীমিত। ভারতের এই সবগুলো অঞ্চলেই জনবসতি বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৪০০, এসব অঞ্চলে ৪০০। এসব অঞ্চলে খনি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করেছে ভারতের রাষ্ট্রীয় সংস্থা। ৯০ দশক থেকে দেশীয় প্রাইভেট কোম্পানির জন্য বিনিয়োগ সুযোগ সম্প্রসারিত হয়। আর বাংলাদেশে শতকরা ৬ ভাগ রয়্যালটির বিনিময়ে পুরো খনির কর্তৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল নতুন বিদেশি কোম্পানির হাতে। আর এই কারণেই যেখানে ভারতে শতভাগ কয়লা দেশেই ব্যবহার করা হয়, সেখানে বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ বিদেশে রফতানিমুখি চুক্তি করা হয়েছিল।

অনুর্বর জমি, কম পানিসম্পদ ও কম জনবসতির ভারতে উন্মুক্ত খনির ভয়াবহতা দেখে, এর কতগুণ বেশি উর্বর জমি, সমৃদ্ধ পানি সম্পদ, ঘন জনবসতির বাংলাদেশে কী অবস্থা হতে পারতো ভেবেই আমরা আতঙ্কিত হই। 

ভারতের এই প্রতিটি অঞ্চলে খনি আর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট করতে গিয়ে জোর গলায় বলা হয়েছিল, সবসময়ই বলা হয়- এগুলো করলে এলাকার উন্নয়ন হবে, মানুষের জীবনমান অনেক উন্নত হবে, কাজের ভালো সংস্থান হবে, শিক্ষা-চিকিৎসার উন্নতি হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই খনি অঞ্চলগুলোতে দারিদ্র, অপুষ্টি, দূষিত পানি, দূষিত বাতাস, আশ্রয়হীনতার সমস্যা অন্য যে কোনো অঞ্চল থেকে অনেক বেশি। ভারতের খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য ঝাড়খণ্ড, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ। শুধু বায়ু ও পানিদূষণ নয়, দারিদ্রের তীব্রতাও এসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। 

কয়লা বিশ্বের ধস ও বাংলাদেশের উল্টো যাত্রা
গোটা বিশ্বেই এখন সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত। লোকসানে রয়েছে বিশ্বের বহু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বেশি খারাপ অবস্থায় আছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, ইউরোপ ও রাশিয়ার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। জ্বালানি খাতের ফিন্যান্সিয়াল থিঙ্কট্যাংক প্রতিষ্ঠান লন্ডনভিত্তিক কার্বন ট্র্যাকারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গোটা বিশ্বের ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন লোকসানে চলছে। কার্বন প্রাইসিং ও বায়ু দূষণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত ইতিবাচক নানা পদক্ষেপের কারণে ২০৪০ সালের মধ্যে এ হার বেড়ে দাঁড়াবে ৭২ শতাংশে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির বিশ্লেষণে দেখা যায় ভারতের কয়লা বিদ্যুৎ ইউরোপের তুলনায় শতকরা ৫০ থেকে ১২০ ভাগ বেশি দূষণকারী। 

উন্মুক্ত খনি। ছবি: অমৃতরাজ, ভারত

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারতের শাসকদের সাফল্য প্রচারণায় তার অন্য দিকটি বারবার ঢাকা পড়ে যায়। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, গড়ে প্রতি বছর ১ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যুর প্রধান কারণ এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। দ্য ল্যানসেট এর ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজেস স্টাডি’ তে বলা হয়েছে ভারতে অকাল মৃত্যুর প্রথম দশটি কারণের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত দূষণ অন্যতম।

ভারতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সৃষ্ট পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত দিকগুলো দিনে দিনে পরিষ্কার হবার ফলে এর বিরুদ্ধে জনমতও শক্তিশালী হচ্ছে। অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রযুক্তি সহজ ও সুলভ হওয়ায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দিকে মনোযোগ অনেক বেড়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কারণেই গত এক দশকে পরিবেশ আইনে একাধিক নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে, এসব প্রকল্প বিষয়ে রায় দেবার জন্য গ্রিন ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। যার কারণে গত কয়বছরে পাঁচ বছরে এনটিপিসিরই বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন পায়নি। এই নির্দেশনা মানলে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে পারতো না এনটিপিসি। 

ভারতে বিদ্যুতের মোট স্থাপিত ক্ষমতা এখন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ এখনো সবচেয়ে বেশি, শতকরা প্রায় ৫৬ ভাগ। তবে ক্রমেই জোর দেওয়ায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের অংশ এখন ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বায়ুবিদ্যৃৎ ১০ শতাংশ, সৌরবিদ্যুৎ ৮.২ শতাংশ। পারমাণবিক বিদ্যুতের অনুপাত সবচেয়ে কম, ১.৯ শতাংশ। বাঁধভিত্তিক বিদ্যুৎ ছাড়া নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের পরিমাণ এখন ৬২ হাজার মেগাওয়াট। ভারত সরকারের জাতীয় বিদ্যুৎ পরিকল্পনা (২০১৬) অনুযায়ী, ২০২২ সালের মধ্যে এই ক্ষমতা ১ লাখ ৭৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে নবায়নযোগ্য ও দূষণমুক্ত অজীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। চীনের ক্ষেত্রেও আমরা এই একই প্রবণতা দেখছি। ভারত, চীনের মতো দেশে কয়লা বিদ্যুতের প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামো এবং তাতে কর্মসংস্থান বিপুল থাকার কারণে দ্রুত তা থেকে সরে আসার জটিলতা আছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য নতুন নিরাপদ যাত্রা অন্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক সহজ ছিল। বাংলাদেশ হতে পারতো বিশ্বে একটি অনুসরণীয় মডেল। 

কিন্তু বাংলাদেশের সরকার করছে উল্টোযাত্রা। শুধু প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশ নয়, আর্থিকভাবেও বড় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে রামপাল, রূপপুর, মাতারবাড়ী, বাঁশখালী, মহেশখালী, পায়রাসহ নানা বৃহৎ প্রকল্প দিয়ে। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি ২০১৬) অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার জোর দিচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ওপরই। এর আওতায় ২০৩০ সাল নাগাদ মোট জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার অবদান বর্তমানের ৩ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে সরকারি, বেসরকারি ও জয়েন্ট ভেঞ্চারে কয়লাভিত্তিক ২৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প নয়- ভারত, চীন ও জাপানের সঙ্গে উপকূল জুড়ে একের পর এক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। পরিত্যক্ত প্রযুক্তি আর বর্জ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পরিণত করা হচ্ছে ভাগাড়ে। এর অনেক ভালো বিকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও সরকার তা গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বিপদের দিকে। ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিলেও কোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ এই পথ সমর্থন করবে না। 

লেখক
আনু মুহাম্মদ
অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

(লেখাটি ত্রৈমাসিক দেশকাল পত্রিকার এপ্রিল-জুন, ২০২০ সংখ্যায় প্রকাশিত)


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //