চলতি বছর মার্চ থেকে নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। অন্যদিকে করোনাভাইরাস ও বন্যার কারণে মানুষের আয় কমছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে বলা হয়েছে, তিন দফা বন্যায় ৩৭ জেলায় ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১০ লাখের ওপরে। সবজির বাজারও চড়ছে পাল্লা দিয়ে। কোনোটির দামই সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। করোনায় অনেকে কাজ হারিয়েছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির, অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের বেতন কমেছে; কিন্তু আয় কমলেও সাধারণ মানুষের ব্যয় কমেনি। কেউ সঞ্চয় ভেঙে, ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।
সম্প্রতি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত বছর দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ শতাংশ। গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি ও বিআইজিডির পরিচালিত গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনায় আয় কমেছে দেশের ৭০ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের। এদের মধ্যে অতি দরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র ও যারা দরিদ্রসীমার ওপরে ছিলেন, তারা দরিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছেন। ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় ৩ লাখ পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৭টি কারখানা কোনো প্রকার শ্রম আইন না মেনে শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক মডেল নেটওয়ার্ক (সানেম) তাদের গবেষণায় উল্লেখ করেছে, করোনায় ৩৪ শতাংশ পোশাক শ্রমিক অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন।
একদিকে মানুষ কাজ হারাচ্ছে, অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে লফিয়ে। বাস্তবতা হলো- এভাবে মানুষের কাজ হারানো-আয় কমে যাওয়া ও দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেলে দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আগেই সরকারের তরফ থেকে বাজার তদারকির দিকে নজর দেওয়া ও বাজারে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা দরকার। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাজারে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন।
একইসঙ্গে এ মুহূর্তে সরকারের প্রয়োজন কৃষি খাতে স্বল্প সুদে পর্যাপ্ত ঋণ প্রদান, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান।
এ উদ্যোগগুলো ছাড়া সাধারণ মানুষের ঘরে দৈনন্দিনের আহার জোগানো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ী, কালোবাজারি, মজুদদার, মধ্যস্বত্বভোগীদের চাঁদাবাজি, দালালী বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ সম্ভব নয়। এজন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি গণসচেতনতা তৈরি ও সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলারও প্রয়োজন রয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh