ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন

ধর্ম প্রকৃত ধার্মিককে শেখায় সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা, সহনশীলতা। কোনো ধর্মই মানুষকে বর্বর, নৃশংস, নির্মানবিক হওয়ার শিক্ষা দেয় না। কিন্তু এই ধর্মের নামেই যখন বর্বরতা চলে, নৃশংসতা মাথা চাড়া দেয়, মানুষ অমানবিক ওঠে তখন বুঝতে হবে গলদটা ধর্মে নয়, অন্য কোথাও।

ধর্মের নামে উন্মাদনা ছড়িয়ে সহিংসতা কারণটা খুঁজতে হবে অন্যত্র। নইলে বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলা সহজ হবে না। ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানোর পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে কখনো ব্যক্তি স্বার্থ, কখনো গোষ্ঠী স্বার্থ, কখনোবা রাজনৈতিক স্বার্থ। যা নিয়ে প্রতিনিয়ত ইস্যু তৈরির চেষ্টা চলে। প্রতিরোধের মুখে না পড়লে এ উন্মাদনা ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। যা নিয়ন্ত্রণ করা শুধু কঠিনই নয়, প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। 

ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো, আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলা অসঙ্গত নয়; কিন্তু মানুষ হত্যার ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের বুড়িমারি এলাকায় একটি মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে একজন নিহত হয়েছেন। নামাজের পর তিনি কোরআন শরীফ রাখার জায়গায় পা দিয়েছেন, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর তার মৃতদেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

ধর্মের অবমাননা ঘৃণ্য কাজ। ধর্মগ্রন্থ অবমাননা আরও জঘন্য। কেউ যদি ধর্ম অবমাননাকর কোনো কাজ করে, ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করে, তবে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন রয়েছে। প্রয়োজনে ধর্ম অবমাননাকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়; কিন্তু কোনো তদন্ত ছাড়া, কেবল রটনার ?ভিত্তিতে এমনভাবে পিটিয়ে হত্যা এবং আগুনে পোড়ানোর মতো বর্বরতা একটি সমাজের চরম অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করে। 

একে জঘন্যতম অপরাধ বলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। দেশে যেন লালমনিরহাটের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজন ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার। এই জঘন্যতম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। পরমতসহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ও সহনশীলতা বজায় রাখার জন্য যা অত্যন্ত জরুরি।

তাই আজ ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সমাজের সব অংশের এগিয়ে আসার সময় এসেছে। সমাজের নৃশংস হয়ে ওঠার পেছনের মনস্তত্ত্ব বোঝাটাও প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারকেই পালন করতে হবে উদ্যোগী ভূমিকা। সব রাজনৈতিক দল, সমাজিক প্রতিষ্ঠান, সমাজের সচেতন মহলকে সঙ্গে নিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনাকে মোকাবেলা করতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //