করোনার ‘দ্বিতীয় প্রবাহ’ সামলাতে সর্বাত্মক উদ্যোগ জরুরি

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আশঙ্কা করা হয়েছিল শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে। গত ৭ নভেম্বর করোনায় সর্বনিম্ন মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। মাত্র দশ দিন পর ১৭ নভেম্বর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে অর্থাৎ তিনগুণ বেড়েছে। ওয়ার্ল্ডমিটারের বিশ্লেষণ অনুসারে, এ মুহূর্তে করোনাকবলিত ২১৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম। ৭ নভেম্বরের পর দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দুটোই বেড়েছে। করোনা ট্র্যাকারের হিসাব মতে, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুহার ১.৪%।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ লাখ কভিড-১৯ পরীক্ষা হয়েছে। করোনা মোকাবেলার একটি বড় দিক হচ্ছে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো। পরীক্ষার সংখ্যা না বাড়িয়ে কেবল আশঙ্কা প্রকাশ করোনা মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রথম প্রবাহ চলাকালে পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতার ফলে সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি। সেই ভুল শুধরে এখন অ্যান্টিজেনভিত্তিক র‌্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেন স্বল্পতম সময়ে রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহে এক লাখে মাত্র ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়, যার প্রায় ৬০ ভাগই ঢাকায়। দ্রুত ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও নমুনা পরীক্ষার হার বাড়াতে হবে।

করোনা মোকাবেলায় কেবল শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে জরিমানার ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয় বরং দরিদ্রদের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসতে পারে। করোনা আক্রান্তর চিকিৎসা সহজলভ্য করতে হবে। সারাদেশে করোনা চিকিৎসা উন্নত করতে হবে। সুস্থ হওয়ার পর করোনাজনিত দীর্ঘ জটিলতা এড়াতে পোস্ট কভিড ফলোআপ প্রয়োজন। করোনার কবল থেকে মুক্তি পাওয়া রোগীদের মধ্যে ফলোআপের পরিসর বাড়াতে হবে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা আগামী বছরের শুরুতে ইউরোপে করোনার তৃতীয় প্রবাহ আসতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। বিগত শতকে স্প্যানিশ ফ্লু তিনটি প্রবাহ মোকাবেলা করেছিল। আমরা এখনো নিশ্চিতভাবে জানি না আমাদের দেশে করোনার প্রথম নাকি দ্বিতীয় প্রবাহ চলছে। 

করোনার প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রবাহ নিয়ে তর্কের কোনো অবকাশ নেই। জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বসাধারণের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা গ্রহণ, দরিদ্রদের মধ্যে করোনা প্রতিরক্ষার সরঞ্জামাদি বিনামূল্যে সরবরাহ, নমুনা পরীক্ষা দ্রুততর করা, পরীক্ষার হার বাড়ানো, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর ফলোআপের ব্যবস্থা করতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //