আগামী ২০২৩ সাল থেকে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া একমুখী শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরে যেসব বিষয় প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আগের মতো সরাসরি মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলো নেই। দীর্ঘদিন ধরে চলমান পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত এই বিষয়গুলো তখন আর মাধ্যমিক স্তরে পৃথকভাবে থাকবে না।
আসন্ন একমুখী শিক্ষায় মাধ্যমিক স্তরের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কিছু বিষয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
লক্ষণীয় যে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তাবিত দশটি বিষয়ের মধ্যে বিজ্ঞান নামে একটি বিষয় বিদ্যমান। ১০০ নম্বরের একটিমাত্র বিজ্ঞান বিষয়ে আর কতটুকু পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান কোর্স সংযুক্ত রাখা সম্ভব হবে- সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
ভৌত বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের জন্য দুইটি পৃথক ল্যাব এবং দুইজন করে ইন্সট্রাক্টর ও দুইজন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকা প্রয়োজন সব স্কুলে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া সাধারণ ক্লাসের মতো ব্যবহারিক ক্লাস তো আর এত সংখ্যায় হয় না বা প্রয়োজন হয় না।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিটি বিষয় থেকে সাধারণ কিছু চ্যাপ্টার নিয়ে বিজ্ঞান নামে একটি কমন বই প্রবর্তন করা হবে। যদি তাই হয়, তবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটিমাত্র সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য বাস্তবে কতটি ল্যাব প্রয়োজন হবে; তা ভেবে দেখা জরুরি। কেননা, ল্যাবের প্রয়োজনীয়তা থাকা না থাকার সঙ্গে জনবল থাকা না থাকা সম্পৃক্ত।
জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ সংশোধন করার ক্ষেত্রে একমুখী শিক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা— এই তিনটি গ্রুপকে একত্র করে প্রবর্তিত হতে যাওয়া নতুন বিষয়গুলোর কথা বিবেচনায় রাখা হচ্ছে কি না; আমার জানা নেই। যতদূর জেনেছি- মাধ্যমিক স্তরে পদার্থ, রসায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান/প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে ল্যাব চালু থাকলে প্রতি বিষয়ে একজন করে ইন্সট্রাক্টর ও একজন করে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট এমপিওভুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে বা হচ্ছে। এখন যদি এই বিধান প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করা হয়, তবে ২০২২ সাল বা তারপরে এই জনবল কতটুকু কাজে লাগবে; তা ভেবে নেয়া উচিত।
সংশোধিত জনবল কাঠামোতে যদি প্রতিটি ব্যবহারিক বিষয়ের জন্য একজন করে ইন্সট্রাক্টর ও একজন করে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয়ার বিধান রাখা হয়, তাহলে এক্ষেত্রে অনেক জনবল বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই ভৌতবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান বিষয়ের অনুমোদিত ল্যাব বিদ্যমান। তদুপরি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের ল্যাবও রয়েছে।
এই ল্যাবগুলোতে যদি একজন করে ইন্সট্রাক্টর ও একজন করে এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ করা হয়, তাহলে আগামীতে একমুখী শিক্ষা চালু হলে এই জনবল অতিরিক্ত হয়ে যেতে পারে। বাস্তবে যদি তাই হয়, তবে সেটি হবে শিক্ষাখাতে অপ্রয়োজনীয় একটি ধারাবাহিক ব্যয়; যা দিয়ে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব অনেক প্রয়োজনীয় শিক্ষক। তবে, প্রস্তাবিত নতুন আঙ্গিকের বিজ্ঞান বিষয় ও ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়সহ অন্য আরো বিষয়ে যদি সব (ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম) শ্রেণিতে পর্যাপ্ত ব্যবহারিক অধ্যায় যুক্ত থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে অধিক জনবল প্রয়োজন হতে পারে।
এমতাবস্থায় জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ সংশোধন কমিটির কর্তাব্যক্তিরা এবং এনসিটিবির কর্মকর্তারা একত্রে বসে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে পরামর্শ ও সমন্বয় করে নতুন জনবল কাঠামো নির্ধারণ করতে পারেন। শুধুমাত্র আলোচিত ক্ষেত্রেই নয়, এমন অন্য আরো ক্ষেত্র থাকতে পারে যেখানে একমুখী শিক্ষার আলোকে জনবল কাঠামো হ্রাস/বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হতে পারে। সেসব বিষয় এখনই পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া অত্যাবশ্যক।
লেখক: অধ্যক্ষ
কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ