অর্থনৈতিক বিকাশে ভাষার ভূমিকা এড়ানোর উপায় নেই

বিভিন্ন সময়ে সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে ভাষাকে ব্যবহার করা হয়েছিল হাতিয়ার হিসেবে। ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ভাষা আজও তার অতীতকে ঘিরেই টিকে আছে।

ভূমি দখলের সাম্রাজ্য বিস্তারের অবসান হয়েছে। জোরালো হয়েছে অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের পালা। এক্ষেত্রে ভাষারও একটি ভূমিকা রয়েছে। 

বিশ্বের মানচিত্রে বৃহত্তম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবসান হয়েছে; কিন্তু ব্রিটিশদের দখলে থাকা দেশগুলোয় প্রশাসনিক, বাণিজ্যিক, বিদ্যায়তনিক পরিসরে ভূতের মতোই জেঁকে বসে আছে ইংরেজি। ভিন্ন ভাষার প্রতি নির্ভরশীলতা অর্থনৈতিক বিকাশে বাধা তৈরি করে। কেবল দেশীয় পরিমণ্ডলে নয়, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ রক্ষায় নিজস্ব ভাষার ব্যবহার অর্থনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমান দুনিয়ার উজ্জ্বল উদাহরণ চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও বেশকিছু দেশ। নিজের ভাষার ওপর ভর করেই তারা তাদের দেশের অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা অর্জনে এগিয়েছে। 

ভাষা ব্যবহারকারীর পরিসংখ্যনে পৃথিবীর সপ্তম ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার অবস্থান। দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ২৬ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ ছাড়া আরো একটি দেশ সিয়েরা লিওনের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও বিশ্বের নানান দেশে বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর প্রভাব বলয় বাড়ছে। একইসাথে বাড়ছে অর্থনৈতিক তৎপরতার সম্ভাবনাও। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সংযোগ গড়ে তুলতে ভাষার ভূমিকাকে কাজে লাগানোর সুযোগও তৈরি হচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিকাশে প্রাত্যহিক প্রশাসনিক কাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রেও বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। এদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। জাতিসংঘে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু বাংলাভাষায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। কূটনৈতিক পরিসরে নিশ্চিত হয়েছিল বাংলাভাষার ব্যবহার; কিন্তু পরবর্তিতে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকেনি। কূটনৈতিক পরিসরেও বাংলাভাষার সম্প্রসারণ সম্ভব হলে তা অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। 

ভাষাকে কেবল সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিবেচনা না করে এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকটিও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা অর্জনে আজকের দুনিয়ায় ভাষার ভূমিকা আরও বাড়ছে। সারাবিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ক্ষেত্র যত বড় হবে, ভাষাকে শক্তিশালী করতে ততবেশি উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশের সঙ্গে যাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী তাদের বাংলাভাষা শিক্ষার জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। প্রয়োজনে এ প্রণোদনা কূটনীতিকদের জন্যও বরাদ্দ করা যেতে পারে। বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রেও বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা শিক্ষার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 

ভাষাকে শক্তিশালী করতে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত এ পদক্ষেপগুলো দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে, অর্থনীতিতে স্বয়ম্ভরতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //