গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সূচকের মানোন্নয়নে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই

‘বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং ধারাবাহিকভাবে এখানে নাগরিক স্বাধীনতার অবনতি হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউসের বার্ষিক প্রতিবেদনের মন্তব্য এটি। 

‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২১ ডেমোক্রেসি আন্ডার সিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও ১৫টি অঞ্চলের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে গণতন্ত্রের মানদণ্ডে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে এবার বাংলাদেশের অর্জন ৩৯। সে অনুযায়ী, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা এখন ‘আংশিক মুক্ত’ দেশের কাতারে রয়েছে। 

আগের বছর ২০২০ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৯। যদিও ২০১৯ সালে স্কোর ছিল ৪১। অর্থাৎ, ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিক স্বাধীনতার অবনতি হয়েছে।

গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭ নম্বরে। বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে মালি, তুরস্ক, তানজানিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ভেনেজুয়েলা ও নিকারাগুয়া। বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দল, তাদের জোটের শরিক, সমালোচক মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের কণ্ঠস্বরকে ধারাবাহিকভাবে হয়রানির মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তি সুসংহত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। 

দুর্নীতি একটি মারাত্মক সমস্যা ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টাগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োগে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং দায়মুক্তির নজিরও আছে। ২০১৬ সাল থেকে দেশে ইসলামি চরমপন্থার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে’। 

যদিও দেশে বিএনপিসহ প্রায় সব সরকারের আমলেই এ ধরনের ঘটনার নজির রয়েছে। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে নাগরিকের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সংকোচনের এরকম খবর হতাশাজনক। গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার সূচকে আমাদের অবস্থান এতটাই নাজুক যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকেও আমরা পিছিয়ে আছি। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ৬৭, ভুটান ৬১, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল ৫৬ এবং মালদ্বীপ ৪০ স্কোর পেয়ে আংশিক মুক্ত তালিকায় আছে। এর আগে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) তালিকায়ও দেখা গেছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে আমাদের অবস্থান সবার নিচে।

যদিও গর্ব করার মতো অর্জনও কিছু কম নয় আমাদের। যেমন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতিসংক্রান্ত কমিটি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে বিশ্বব্যাংক নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও মানব উন্নয়নের সূচক বহির্বিশ্বে প্রশংসিত। ভারতের চেয়ে আমাদের গড় আয়ু বেশি। গড় আয়ও প্রায় কাছাকাছি ইত্যাদি। 

তবে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সূচকে দেশের মানোন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। সেইসাথে নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা যেন খর্ব না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //