সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছেই: প্রয়োজন দৃশ্যমান পদক্ষেপ

জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যারা অঙ্গীকার করেছে ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে কাজ করবে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। 

অথচ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই দেশে ৪০৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় চিরবিদায় নিয়েছেন ৫১৭ জন ও আহত হয়েছেন ৬৫৯ জন। দেশের সড়কে এভাবেই বেপরোয়া যানের চাকায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন শত মানুষ।

আমাদের দেশে কী কারণে এত বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। পুলিশের দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে কোনো না কোনোভাবে চালক দায়ী। অতিরিক্ত গতি, ঝুঁকিপূর্ণ যান ও চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও চালকের অসতর্কতায় ঘটে আরো প্রায় ১০ শতাংশ দুর্ঘটনা। 

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ। প্রাণহানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২২ ও আহতের হার তিন দশমিক ৮৮ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের কারণে দুই মাস সড়কে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকার পরেও আগের বছরের তুলনায় দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়াটা বেশ আতঙ্কের। রোড সেফটির দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে কেবল ফেব্রুয়ারিতেই মোট ৪০৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৫১৭ জনের।

সড়ক দুর্ঘটনা তদারকির দায়িত্বে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা প্রশাসন থাকলেও কোনো দফতরেরই এ সমস্যা রোধে নেই দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ। আইন রক্ষকদের ঢিলেঢালা ভাব ও দুর্নীতির কারণে চালকদের মধ্যে আইন ভাঙার প্রবণতা বাড়ছেই। 

সড়ক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে তাই দায়ী চালকদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। টেকসই ও নিরাপদ যানবাহনের ব্যবস্থা, দক্ষ চালক নিশ্চিত, চালকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা, শহরগুলোয় নিরাপদ গতি ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও নতুন প্রযুক্তি সংযোজন করতে হবে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বেদখলমুক্ত করতে হবে সড়কের ফুটপাত এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে থাকা হাট-বাজার। 

এক্ষেত্রে বিআরটিএ’র অসাধু কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এ বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে। সেইসাথে যাত্রী সাধারণের সচেতনতাও বাড়াতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //