শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি : পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে

দেশে চলছে চরম দাবদাহ। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে তাপমাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই বৃদ্ধি পাচ্ছে গড় তাপমাত্রা। প্রতি বছরই বৈশ্বিক উষ্ণতার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ বছরও এর আগের সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। 

চলতি বছর দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় গত ২৫ এপ্রিল যশোরে ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকাতেও ২৬ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

তাপ বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবন, প্রকৃতি ও উদ্ভিদ জগতে। তথ্য বলছে, গত দুই দশকে গ্রামের তুলনায় ঢাকায় ২ দশমিক ৭৪ ডিগ্রি, চট্টগ্রামে ১ দশমিক ৯২, খুলনায় ১ দশমিক ২৭, সিলেটে ১ দশমিক ১০ ও রাজশাহীতে শূন্য দশমিক ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। 

প্রকৃতপক্ষে বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা আজকে যে উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে, তার অন্যতম কারণ দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিপুল জনস্রোত শহরমুখী হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের উপযোগের ব্যবহার এবং অপচয় বেড়েছে, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অন্যতম প্রভাবক ভূমিকা রেখেছে। একইসঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে শহরাঞ্চলে কমেছে কৃষিজমির পরিমাণ। হ্রাস পেয়েছে জলাভূমি। জনসংখ্যার চাপ সামলাতে অনেকটা পরিকল্পনাহীনভাবে আমাদের বড় শহরগুলোয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। নগরে উন্নয়নের নামে আমরা শহরকে কংক্রিট দিয়ে ঢেকে ফেলছি, যা আমাদের নগরের উষ্ণতা বাড়িয়ে তুলছে। 

এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শহরের ভবনগুলো যেসব আনুষঙ্গিক উপকরণে নির্মিত, এগুলোর কারণে বেশির ভাগ অবকাঠামো দিনেরবেলা উত্তপ্ত থাকে, আবার রাতে যে হারে শীতল হওয়ার কথা, তা না হয়ে তাপ ধরে রাখে। এ উদ্বৃত্ত তাপও আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে মিশে তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। তাই নগরবাসী বিদ্যমান বহু সমস্যার সঙ্গে অতিমাত্রায় উষ্ণতাও অনুভব করছে। একদিকে জনজীবনে বাড়ছে অস্বস্তি, অন্যদিকে শক্তিসম্পদের ওপর বাড়ছে চাপ। দেখা দিচ্ছে নিত্যনতুন রোগবালাই। একইভাবে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে শীতলতা বজায় রাখতে, যা অদূর ভবিষ্যতে বাড়াবে পানিসম্পদের ওপর চাপ। 

পৃথিবী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থভাবে টিকে থাকার সুযোগ দিতে হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সবরকমের উদ্যোগ নিতে হবে। নগরের উষ্ণতা রোধে বাড়াতে হবে সবুজ আচ্ছাদিত পরিসরের সংখ্যা। সংরক্ষণ করতে হবে বিদ্যমান জলাভূমিগুলো। তাপমাত্রার প্রকোপ কমাতে উদ্ভাবনমূলক নানা কৌশলের উন্মেষ ঘটাতে হবে। তার জন্য চাই গবেষণা। বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //