রেলের উন্নয়নে প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা

রেলের বরাদ্দ দফায় দফায় বাড়ছে; কিন্তু বাড়ছে না গতি ও কাক্ষিত সেবার মান। বর্তমান সরকারের সময় রেলে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তবে বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি আর অদক্ষতার কারণে, ফল আসছে না। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ মেরামতসহ কিছু প্রকল্প বাবদ রেলের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও কাজ হচ্ছে না। 

উল্টো রেলপথে আরো ঝুঁকি বেড়েছে। আয়ুষ্কাল পার হওয়া ইঞ্জিন ও কোচ বিপদ ডেকে আনছে। ১৫ থেকে ২০ বছর আগে ট্রেনের গতি যেখানে ছিল ঘণ্টায় ৯০ কি.মি. বর্তমানে তা ৫৩ কি.মি.তে নেমে এসেছে। 

কোনো পদক্ষেপের পেছনে যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে তাতে অর্থেরই কেবল অপচয় হয় না, এর সুফলও পায় না জনগণ। বাংলাদেশ রেলওয়ের হয়েছে সেই দশা। গত এক যুগে নতুন রেলপথ ও স্টেশন ভবন নির্মাণ, সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে সরকার। দুঃখজনকভাবে এত বিনিয়োগ সত্ত্বেও যাত্রীসেবার মান বাড়েনি। সিডিউল বিপর্যয়, দুর্ঘটনা, অবকাঠামোগত দুর্বলতার বিষয়গুলো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সংস্থাটি। এর অর্থ হচ্ছে, যে লক্ষ্য নিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা অর্জিত হয়নি। 

মূলত দুর্নীতি, সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই লাভজনক হচ্ছে না রেলওয়ে। অভিযোগ রয়েছে, প্রয়োজনীয় প্রকল্পের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের কারণেই যাত্রীসেবার মান বাড়ছে না। বেশিরভাগ প্রকল্প নেয়া হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। কোন কাজটি আগে করতে হবে, কোনটি পরে- তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে না। গত ১১ বছরে রেলের উন্নয়নে সরকার ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করার পরও লোকসান কমাতে পারেনি। গত অর্থবছরে রেলের পরিচালন লোকসান (অপারেটিং লস) হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। 

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে গণপরিবহনের সবচেয়ে সুবিধাজনক ও কার্যকর মাধ্যম হতে পারতো রেল পরিবহন; কিন্তু কেন হয়নি, সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয় না; যা কিছু করার চেষ্টা হয়, তাও ফলপ্রসূ হয় না। 

এ অবস্থার উত্তরণে রেলওয়ের উচিত যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়া। রেল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। সরকারকে খুঁজে দেখতে হবে, তারা কী লক্ষ্য অর্জনে রেলে বিপুল বিনিয়োগ করেছে? সেই লক্ষ্য কী অর্জিত হয়েছে? হলে কতটা হয়েছে, তা মূল্যায়ন করতে হবে। পুরো অর্জন না হলে এর জন্য কারা দায়ী, তাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //