আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি

জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হোক

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গৃহহীন মানুষকে ঘর উপহার ছিল মুজিববর্ষের একটি অন্যতম প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মাত্র এক বছরের মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি পরিবারকে ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে; কিন্তু সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্নীতি ও অনিয়মে জনকল্যাণমূলক এই কার্যক্রমটি ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। ঘর বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তো রয়েছেই, নির্মাণ নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। জানা গেছে, নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যেই অনেক ঘর ধসে গেছে, ফাটল দেখা দিয়েছে বেশ কয়েকটিতে, কোথাও আবার দরজা জানালা ভেঙে গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে এমন পরিস্থিতি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, এ পর্যন্ত ২২ জেলার ২৬ উপজেলায় মোট ৩০০টি ঘরের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে- ঘরগুলো বসবাসযোগ্য নয়। নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলারহাটের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। বরগুনার আমতলীতে বিম ছাড়া ঘর নির্মাণ করায় হস্তান্তরের দুই মাসের মধ্যেই বেশিরভাগ ঘরের দরজা জানালা ভেঙে গেছে। নিম্নমানের কাজ করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ঘর তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনিয়ম ঢাকতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাতটি ঘর রাতের আঁধারে ভেঙে দিয়েছেন বর্তমান ইউএনও। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে পাওয়া গেছে ঘরের নকশা পরিবর্তনের অভিযোগ। এমনকি কুড়িগ্রামের রৌমারীতে হস্তান্তরের আগেই বৃষ্টিতে ধসে পড়েছে পাঁচটি ঘর। এই হচ্ছে গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর উপহারের প্রকৃত চিত্র।

নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের পরিপূর্ণ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় ওইসব ঘরে বসবাসই করছে না অনেক পরিবার। তবে বরাদ্দ বাতিল হওয়ার আশঙ্কায় মাঝে মাঝে এগুলো নামকাওয়াস্তে ব্যবহার করা হয়।

এ ছাড়া প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্নস্থানে অর্থের বিনিময়ে সচ্ছলদের বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। গৃহনির্মাণের জন্য প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ওপর নির্দেশ ছিল পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের; কিন্তু অভিযোগ আছে অনেক উপজেলায় ইউএনও কোনো সভা না করে গোপনে সব কাজ একাই করতেন। 

নিঃস্ব, গৃহহীন ও আশ্রয়হীন মানুষের বাসস্থানের এই অবলম্বনটুকু নিয়েও এক শ্রেণির মানুষের দুর্নীতি বাণিজ্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আশা করব, জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে, এরকম একটি মহৎ উদ্যোগ যেন ব্যর্থ না হয়- সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

-সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৪ জুলাই সংখ্যা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //