অপরাধ প্রমাণের আগেই

অপরাধী আখ্যায়িত করা ঠিক না

গত ৪ আগস্ট দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করা হয়েছে। র‌্যাব সংবাদ সম্মেলনে তার বাসায় ১৯টি বিদেশি মদের বোতল ছাড়াও এলএসডি ও আইসের মতো মাদক উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করে। 

সর্বশেষ তথ্য হলো, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় অভিনেত্রীকে তিন দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

এখনো আলোচ্য বিষয়টির বিচার শুরু হয়নি; কিন্তু আদালতের রায়ের আগেই সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে পরীমনিকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। তাকে নিয়ে নানা ধরনের অস্বস্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, তার বাসায় একটি বার ছিল। উচ্চমহলের সহযোগিতা না থাকলে সেই বারে কীভাবে মদ সংগ্রহ সম্ভব ছিল? যদি মদ বাড়িতে রাখা পরীমনির অপরাধ হয়, তবে সেই অপরাধের শাস্তি তিনি যথানিয়মেই পাবেন; কিন্তু যাদের সাহস আর সহযোগিতায় তিনি এসব সম্ভব করেছিলেন, তাদের কি আইনের আওতায় আনা জরুরি নয়? সেক্ষেত্রে পুলিশের সদিচ্ছা আছে বলে দেখা যাচ্ছে না বরং দফায় দফায় তাকে রিমান্ডে এনে, জামিন না দিয়ে, তার বিরুদ্ধে কুৎসিত মন্তব্য করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রকাশ করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান।

পরীমনি ন্যায়বিচার পাবেন কি-না, এ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়ে উঠেছেন সুধীসমাজ। এ বিষয়ে আশঙ্কার মূল কারণগুলো হলো, জামিন অযোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরীমনিকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি জামিনের আবেদনও শোনা হচ্ছে না। তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করতে গেলেও করতে দেওয়া হয়নি। আইনজীবীকে পরীমনির সঙ্গে কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। যদি বিচারক উপস্থিত থাকেন ও আসামি কাঠগড়ায় থাকেন, তখন আইনজীবী কথা বলতে পারেন না; কিন্তু এর বাইরে অন্য সময় আইনজীবী কথা বলতে পারবেন না- এমন বিধিনিষেধ না থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না।

পরীমনিকে বারবার রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে কেন, এ বিষয়টিরও কোনো সদুত্তর মিলছে না। যে আইনে তাকে আটক করা হয়েছে, তাতে এরকম দফায় দফায় রিমান্ডের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজ্ঞরাও। তারা আসলে কী তথ্য জানতে চান, এ প্রশ্ন সবার। 

প্রায় একই সময়ে গ্রেফতার হয়েছেন পিয়াসা, মৌ এবং হেলেনা জাহাঙ্গীরও। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল মন্তব্যের ঝড় দেখা গেছে। এক্ষেত্রে পুলিশ, প্রশাসনের ভূমিকা বিস্ময়কর। একজন অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার আগেই তাকে ‘রাতের রানী’ হিসেবে মিডিয়ার কাছে পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে, যা কোনো অর্থেই সমীচীন নয়। পরীমনিসহ অন্যরা যদি কোনো অপরাধ করে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে; কিন্তু তারা যেন কারও কোনো প্রতিহিংসার শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালত কর্তৃক অপরাধ প্রমাণের আগেই এভাবে তাদের চরিত্র হনন ও অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করা উচিত নয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //