চালের ঊর্ধ্বমুখী বাজার

ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচির প্রতিবন্ধকতা দূর করুন

এবারের বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন এবং আনুমানিক প্রায় দুই কোটি টনের বেশি ধান কাটা হলেও চালের দাম কমেনি। বিশেষ করে মোটা চালের আকাশছোঁয়া দামে কষ্টে আছেন গরিব ও নিম্নবিত্তের মানুষ। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে এবারও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো সংগ্রহ করতে না পারাকেই দায়ী করা হচ্ছে। 

কারণ, সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমে গেলে বাজারে তার প্রভাব পড়ে, চালের দাম বেড়ে যায়। আমদানির মাধ্যমে এই সমস্যার সাময়িক উত্তরণ হলেও এটি স্থায়ী ও কার্যকর সমাধান নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সরকারের বেশি বেশি চাল সংগ্রহ করা প্রয়োজন ছিল, যা হয়নি। বোরো মৌসুমের আগে সরকারের মজুদ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানোর নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছিল। ফলে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়ে ৫২ টাকা হয়ে যায়। সরকার স্থানীয় বাজার থেকে অন্য জাতের চাল সংগ্রহ করে মজুদ বাড়ালেও বাজারে দাম আর কমেনি। যদিও গত বছরের তুলনায় এ বছর সংগ্রহ বেড়েছে তারপরও প্রয়োজনের অনুপাতে তা যথেষ্ট নয়। 

জানা গেছে, খাদ্যগুদামে সিন্ডিকেটের দাপট, ধান বিক্রির জন্য সনাতনী শর্তসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সাধারণ কৃষক। অন্যদিকে চালকলগুলোর মালিকরা সরকার নির্ধারিত দামে চুক্তিবদ্ধ হয়েও চাল সরবরাহ করেননি। যদিও এ বছর বোরোতে ধান-চালের দাম বেশ বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছিল সরকার; তারপরও সংগ্রহ হয়নি পুরোটা। কারণ, ধানের দাম সরকার বাড়িয়ে নির্ধারণ করলেও সংগ্রহের সময় বাজারে দাম আরও বেশি ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রমে এ রকম নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ভূমিকা না থাকায় যার দাম দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যেসব মিলার সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরেও চাল দিচ্ছে না, তাদের কালো তালিকাভুক্ত ও শাস্তি দেওয়া দরকার।

শুল্ক কমিয়ে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আমদানি করা চাল বাংলাদেশে আসতে শুরু করলেও চালের দাম কমেনি এখনো। যদিও ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, চাল আমদানি শুরু হলেই দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমদানি বাড়িয়ে দ্রুত চালের মজুদ বাড়ানোর পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে নজরদারি জোরদার করতে হবে। ওএমএস কর্মসূচির আওতায় চাল বিক্রি করা হলেও তা অপ্রতুল। আর এ কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল কিনতে গিয়ে অনেকেই না পেয়ে ফিরছেন খালি হাতে। তাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খোলা বাজার কার্যক্রম (ওএমএস) বাড়াতে হবে। 

দেশে চাল উৎপাদনের খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এ কারণে সরকারের উচিত কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া। এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলে স্থানীয় কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থও রক্ষা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : বাজার ধান

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //