গণপরিবহনে ‘হাফ পাস’ কার্যকর করুন

গণপরিবহনে ‘হাফ পাস’ বা অর্ধেক ভাড়া নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। চলতি মাসে তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বর্ধিত বাসভাড়ার প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য অর্ধেক ভাড়া চালুর দাবি জানায়। 

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষার্থীরা পরিবহনের ভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘ছাড়’ পেয়ে থাকে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা কেন এ সুবিধা পাবে না, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। 

হাফ পাস দাবির বিষয়টিও নতুন নয়। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত ১১ দফার একটি ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া রাখা। আন্দোলনের পর ইয়াহিয়া খানের সামরিক আদেশে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনগত ভিত্তি না থাকলেও হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের অধিকার। পাকিস্তান শাসনামলে আন্দোলন করেই সেই অধিকার আদায় করেছে শিক্ষার্থীরা। 

একসময় বাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখালেই কন্ডাক্টররা হাফ ভাড়া নিত; কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে বিশেষত ঢাকা শহরের কিছু সিটিং সার্ভিসে হাফ ভাড়া না রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ নিয়ে নানা সময়ে ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’-এর ৯ দফা দাবির মধ্যেও হাফ ভাড়ার বিষয়টি ছিল। তারপরও এই হাফ ভাড়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক বা ঝামেলার ইতি ঘটেনি। 

সরকার শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে; কিন্তু পরিবহনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের জন্য কোনো সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি করতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্তের একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে মাসে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করতে দুই হাজার বা ততধিক টাকা ব্যয় করা কতটা কঠিন, তা বিবেচনার দাবি রাখে।

যদিও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মৌখিকভাবে হাফ পাস কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছিলেন; কিন্তু হাফ ভাড়া নিয়ে বর্তমানে কোনো লিখিত আইন নেই। এ নিয়ে মন্ত্রিসভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সড়ক পরিবহন আইনেও হাফ ভাড়ার কথা নেই। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বেসরকারি গণপরিবহনের সঙ্গে সরকার চুক্তি করে থাকে। এ ব্যাপারে সরকারকে নীতিমালা তৈরিসহ আইন প্রণয়ন করতে হবে। শুধু আইন তৈরি নয়, তা বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারিও প্রয়োজন। 

শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতসহ শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ দিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে ‘হাফ পাস’ কার্যকর করবে। করোনা মহামারির দীর্ঘ বন্ধে পড়াশোনার এমনিতেই অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আর ক্ষতি কাম্য নয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //