দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশ

শূন্য সহনশীল নীতি প্রয়োজন

সম্প্রতি প্রকাশিত বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ২৭তম দুর্নীতি ধারণা সূচকে (সিপিআই) নিম্নক্রমের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এক ধাপ এগিয়েছে।

টিআইবি বলছে, তালিকার অবস্থানে পরিবর্তন হলেও আসলে বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্রের পরিবর্তন হয়নি। কারণ বাংলাদেশের স্কোরের পরিবর্তন হয়নি। অন্য দেশের ভালো-খারাপ করার কারণে কেবল তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে ২৬ স্কোর নিয়ে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে নিচের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২ থেকে ১৫-এর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা ঘোষণাও কাজে আসেনি। এমনকি করোনা মহামারিতেও বন্ধ হয়নি অনিয়ম-দুর্নীতি। বরং এ সময় দেশের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ব্যাপকতা যেমন দেখা গেছে, তেমনি আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেছে। ফলে দুর্নীতি সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু আফগানিস্তান বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে; অন্য দেশগুলোর অবস্থান আমাদের ওপরে।

২০০১ সাল থেকে টানা পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতির ধারণা সূচকে নিম্নতম দেশগুলোর সারিতে স্থান পেয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে এ ক্ষেত্রে ক্রমেই উন্নতি করেছিল বাংলাদেশ; কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ধরে রাখা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে সরকারের নির্দেশের বাস্তবায়িত না হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আর বর্তমানে সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ৬ হাজার টাকার বালিশ, ২৭ লাখ টাকার পর্দা, ১৬ গুণ অতিরিক্ত দামে মেডিকেলের বই ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারি কেনাকাটায় হরিলুটের অভিযোগ এখন নিত্য নৈমিত্তিক। হতদরিদ্রদের জন্য বিশেষ সহায়তা হিসেবে সরকারপ্রদত্ত আর্থিক অনুদান কার্যক্রমও বাদ পড়েনি দুর্নীতি থেকে। অতিমারি করোনাকালে মাস্ক-পিপিই ও ভেন্টিলেটরের মতো জরুরি স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনায়ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসবই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে জনপ্রশাসন দুর্নীতির মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে।

উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের যাত্রা গতিশীল করতে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই। এ জন্য সরকারের সদিচ্ছা যেমন প্রয়োজন, পাশাপাশি দুদক কিংবা আইনের কঠোরতাও দরকার। দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু ক্ষমতাবানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারি কাজে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবের যেসব ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিফলন টিআইর প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

দুর্নীতি দূর করার বিষয়টি কেবল অর্থনৈতিক মুক্তির সঙ্গেই যুক্ত নয়, একটি জাতির মর্যাদারও প্রশ্ন। তাই হতাশার এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে শূন্য সহনশীলতা নীতি ও প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের প্রত্যাশিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে এদের রুখতে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //