ডায়রিয়ার প্রকোপ

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি

মার্চের মাঝামাঝি থেকে রাজধানীতে বেড়ে যাওয়া ডায়রিয়ার প্রকোপ এখনো কমেনি। বরং পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। 

রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) সূত্রমতে, সাধারণত গরমের মৌসুমে সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ থেকে ৭শ’ রোগী ভর্তি হতো; কিন্তু এবারের গরমে প্রতিদিন গড়ে ১২শ’র বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে, যা প্রতিষ্ঠানটির ৬০ বছরের ইতিহাসে একদিনে একসাথে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সর্বোচ্চ ঘটনা। বাড়তি রোগীদের বিশেষায়িত এই হাসপাতালের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যে চাপ সামাল দিতে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

আইসিডিডিআর,বির তথ্যানুযায়ী সুপেয় পানির অভাব রয়েছে রাজধানীর এরকম নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকেই রোগী বেশি আসছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানিকে ওয়াসা ‘নিরাপদ’ বললেও প্রতিদিন নানাভাবে তা দূষণের শিকার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে পানি ফুটিয়ে পান করলেও তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় কলেরা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। 

বিশ্বব্যাংক ‘প্রমিজিং প্রগ্রেস : এ ডায়াগনস্টিক অব ওয়াটার সাপ্লাই, স্যানিটেশন, হাইজিন অ্যান্ড প্রভার্টি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানির ৮০ শতাংশেই ডায়রিয়ার জীবাণুর (ই-কোলাই) উপস্থিতির কথা বলা হয়েছিল। দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এলেও এই অনিরাপদ পানির কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের পানি ফুটিয়ে খাওয়ার সুযোগ নেই, তাদের ময়লা ও জীবাণুযুক্ত পানিই খেতে হয়। এছাড়া রাস্তার পাশের সস্তা হোটেল-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা পানি ও খাবার থেকেও এ রোগ ছড়াতে পারে, যার দায় ওয়াসা এড়িয়ে যেতে পারে না। 

এছাড়াও প্রয়োজন আরো কিছু বিষয়ে সতর্ক হওয়া। করোনা-পরবর্তী সময়ে যেহেতু দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে গেছে; সেখানে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা রাস্তার পাশের খাবারের দোকানগুলো থেকে দূষিত পানি ও ভাজাপোড়া খাদ্য গ্রহণ করায় অনেকেই ফুড পয়জনিং ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার ও বাইরের পানি পানের বিষয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মমুখী সবাইকে সাবধান হতে হবে এবং সচেতন করতে হবে। এসব ভেজাল ও মানহীন খাবার গ্রহণ করে ভোক্তারা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন; অন্যদিকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা থেকে পরিত্রাণের উপায় খোঁজা জরুরি।

তাপমাত্রা কমে এলে ব্যাকটেরিয়াজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপ কমে আসবে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন; কিন্তু তার আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। তাই ওয়াশাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //