বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ের তলানিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধি জরুরি

সম্প্রতি প্রকাশিত কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং ২০২২-এর শীর্ষ ১০০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বাংলাদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই র‌্যাংকিং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্রমাগত অবনতিরই একটি বাস্তব চিত্র।

২০১৯ সালের পর বাংলাদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এই তালিকার সেরা ১০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

৬ এপ্রিল প্রকাশিত এই র‌্যাংকিং অনুযায়ী, বিশ্বের ৬৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪২তম অবস্থানে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তালিকার শীর্ষ ২০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থাকলেও আগের ৩ বছরের তুলনায় আরো নেমে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংক। এর আগে, ২০২১ ও ২০২০ সালে ১৩৫তম এবং ২০১৯ সালে তালিকার ১২৭তম স্থানে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, লন্ডনভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনের বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতেও ছিল না বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। ৯২টি দেশের ১ হাজার ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার তলানিতে ছিল শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একই সূচকে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জায়গা করে নিতে পারলেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থান না পাওয়াটা সত্যিই হতাশাজনক। ওই জরিপ থেকেই জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছিল গবেষণায়। 

এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানের এই ক্রমাবনতির পেছনের কারণগুলো বের করে তার সমাধান জরুরি। এখানে শিক্ষক নিয়োগ থেকে পদায়ন-পদোন্নতি সব ক্ষেত্রেই মেধার চেয়ে দলীয় আনুগত্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পছন্দের ব্যক্তিকে শিক্ষক করার জন্য আইন শিথিল করার বহু উদাহরণ আছে। এই মানহীন, শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সার্বিক জ্ঞানার্জন কতটা সম্ভব? তাছাড়া শিক্ষকদের গবেষণার পরিবর্তে রাজনীতি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অথচ, গবেষণা না হলে, শিক্ষার মানবৃদ্ধি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। 

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মানের অবনতির ফলে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের শিক্ষার্থীরা। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ ও শিক্ষার মান নিয়েও আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই। প্রবীণ, অভিজ্ঞ ও পূর্ণকালীন শিক্ষকের অভাব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এক বড় সমস্যা।

সরকার জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করছে, ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা সনদপ্রাপ্ত হয়তো হচ্ছে কিন্তু যথার্থ শিক্ষালাভ হচ্ছে না। তাই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ালে চলবে না, শিক্ষা ও গবেষণার মানবৃদ্ধি ও তা ধরে রাখতে সক্রিয় হতে হবে। নইলে এই অবস্থার উত্তরণ সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //