অবৈধ সার মজুতদারের লাগাম টানা জরুরি

একজন জাপানি বন্ধু বলছিলেন, তাদের দেশে কোনো শিশু যদি একটা ভাত নষ্ট করে তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। সেটা সেখানে চালের দাম বেশি বলে নয়। শাস্তি দেওয়া হয় এজন্য যে, ওই চাল তৈরি করতে একজন কৃষকের ছয় মাস সময় লাগে এবং কৃষকরা অনেক কষ্টে ফসল ফলান। আমরা কি এ ঘটনার মর্ম বুঝতে পারব? 

ফসলের মৌসুমে আমাদের এখানে ফসল ফলানোর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর সংকট বেড়ে যায়, অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি, অবৈধ মজুত এবং আরও যা কিছু হয়- এ ধরনের বিষয় শুধু জাপানিরা না, আমরা সব বিষয়ে যে দেশকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করি সেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও তা হয় না।     

বেশ কিছুদিন থেকে আমন মৌসুমে যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা খতিয়ে দেখলে দেখা যায়- দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউরিয়া এবং এমওপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে। সময়মতো এবং চাহিদা অনুযায়ী কৃষকরা সার পাচ্ছেন না বলে কয়েক দিন আগে জামালপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকরা। এমওপি সারের অভাবে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা সবজি চাষাবাদ করতে পারছেন না। 

উত্তরবঙ্গে আমন ধান লাগানোর মৌসুম চলছে। চারা রোপণের পর দুই সপ্তাহ হয়েছে। এ অবস্থায় জমিতে ইউরিয়া সার দেওয়া প্রয়োজন। সার সংকটের জন্য তা না দেওয়ায় ধানের চারা লাল হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, দ্রুত সার দিতে না পারলে আমন ধান ঠিকভাবে হবে না। নওগাঁর কৃষকরা বলছেন, তারা ৫-৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও সার পাচ্ছেন না।   

কয়েকজন ডিলার কৃষকদের সমস্যা এবং অভিযোগগুলো স্বীকার করে বলেছেন, ইউরিয়া এবং এমওপি সার প্রয়োজনের তুলনায় কম। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, সারের কোনো সংকট নেই। কোথাও সারের চাহিদা কম, কোথাও বেশি। বিষয়টি আমরা সমন্বয়ের চেষ্টা করছি। 

২ সেপ্টেম্বর নওগাঁর পোরশা উপজেলার শিশা বাজার এলাকার একজন ডিলারের গুদাম থেকে প্রশাসন ছয় হাজার বস্তা সার উদ্ধার করেছেন। ১১ সেপ্টেম্বর গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের শাহ আলম আকন্দের গুদামে অবৈধভাবে রাখা ৮০০ বস্তা টিএসপি সার জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।  

এছাড়াও সরকার নির্ধারিত ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা এমওপি সারের মূল্য ৭৫০ টাকা। কিন্তু তা নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৬০০-৭০০ টাকা। এ পরিস্থিতিতে কৃষকের করণীয় কী? কৃষক কোথায় যাবেন এবং কীভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন? তাই তারা বিক্ষোভ-মিছিল করে তাদের সমস্যাগুলো বলছেন। কিন্তু কে শুনছে তাদের কথা? কে দাঁড়াবে তাদের পাশে? কৃষক যদি উৎপাদন করতে না পারেন তাহলে দেশের মানুষ খাবে কী? 

আমন মৌসুমের শুরুতে ইউরিয়া সারের বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৬ টাকা। একই সঙ্গে ডিজেল ও তেলের মূল্যও বেড়েছে। ওই সময়ে দেশব্যাপী লোডশেডিং শুরু হয়েছে। ফলে কৃষকরা ঠিকভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছিলেন না। সাধারণত এ সময় বৃষ্টির পানিতে কৃষকরা আমন ধানের জন্য জমি প্রস্তুত করে নেন। এ বছর এত খরা হয়েছে যে বাড়তি টাকা খরচ করে তাদেরকে জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে তারা ফসল ফলানোর চেষ্টা করছেন। 

পুরো পরিস্থিতি বিচার করলে দেখা যায়, কতটা অসহায় এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে কৃষকরা ফসল ফলান। সরকার কি পারে না তাদেরকে নির্বিঘ্ন ফসল ফলাতে সাহায্য করতে? কৃষকরা যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী এবং সময়মতো সার, বীজ ও সেচ দিতে পারেন সে বিষয়ে নজর রাখা কি সরকারের পক্ষে এত কঠিন? প্রত্যেকটি অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন যাতে এ ধরনের কাজ আর কেউ না করে। সরকারের উচিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে মনিটর করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। নইলে এই অপরাধ বেড়ে যাবে বহুগুণ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //