হিলির পানচাষিদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন

পান ভেষজগুণ সম্পন্ন এক ধরনের গুল্মজাতীয় গাছের পাতা। এটি অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে সজীব নিঃশ্বাস ছড়িয়ে দেয়। এটি কোলেস্টেরল কমায়, হার্ট ভালো রাখে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। এটি দাঁত ও মুখের ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়। 

প্রাচীনকাল থেকে পান বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। বাংলাপিডিয়া বলছে, পান থেকে এত বেশি আয় হতো যে, বাংলার সুবেদার আজিম-উস-শান পানচাষকে ‘সাউদিয়া খাস’ নামে রাজকীয় ব্যবসা হিসেবে পরিণত করেন। রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৭ সালে পানচাষকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা হিসেবে পরিণত করেন। 

বর্তমানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে পান রপ্তানি করে প্রত্যেক বছর ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পানচাষ হয়। দিনাজপুরের হিলির সীমান্তবর্তী এলাকা ঘাসুরিয়া, ঘনশ্যামপুর ও মাধবপাড়ায় সব সময় পান চাষ হলেও সাম্প্রতিক কোভিড পরিস্থিতিতে ভারত থেকে পান আমদানি বন্ধ থাকার জন্য পানচাষ বেড়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। ফলন ও ভালো দাম হওয়ায় দিন দিন পান চাষ বাড়ছে। এজন্য ওসব এলাকার বেকার যুবকরাও পানচাষে বিনিয়োগ করছেন। অনেকেই ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পানচাষ করেছেন। হিলিতে গত বছর ৩৭ হেক্টর জমিতে পানচাষ হয়েছিল। এ বছর ৪০ হেক্টর জমিতে ৩৫৬টি পানের বরজ রয়েছে। 

কৃষকরা বলছেন, সম্প্রতি পানের গোড়া পচন রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগে ধীরে ধীরে পানগাছ মরে পাতা ঝরে যায় কিংবা পানের পাতায় পচন হচ্ছে। বরজ বাঁচাতে চাষিরা অনেক পানগাছ উপড়ে ফেলে দিচ্ছেন। 

তারা বলছেন, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করেও পচন রোধ করা যাচ্ছে না। 

রোগের কারণ হিসেবে বিরূপ আবহাওয়া ও অনাবৃষ্টিকে সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন। বিষয়টি কতটুকু সত্যি তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ সমস্যা পুরোপুরি আবহাওয়া কেন্দ্রিক। বৃষ্টিপাতের অভাবে মাটির গুণাগুণে পরিবর্তন এসেছে এবং এতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে গুরুত্ব দিলে চলবে না। এটিকে গুরুতর সমস্যা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয়ভাবে দেখতে হবে। আক্রান্ত স্থানের মাটি ও পানের নমুনা কৃষি গবেষণাগারে পাঠানো প্রয়োজন। সেখানকার বিজ্ঞানীরা বিষয়টি পরীক্ষা করে কীভাবে রোগ সারানো যায় সে বিষয়ে পরামর্শ বা সমাধান দিতে পারেন।

এছাড়া এ সমস্যা অন্যান্য এলাকায় দেখা দিয়েছে কি না সেটাও দ্রুত জানা প্রয়োজন। চাষিরা বলছেন খরার জন্য এ বছর পান তেমনভাবে বাড়ছে না। এজন্য হয়তো সেচ প্রয়োজন। সেটা কখন কীভাবে দিতে হবে তা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে জেনে নিয়ে তা প্রয়োগ করতে হবে। 

পান তোলার তিনটি মৌসুম (আষাঢ়, কার্তিক ও ফাল্গুন) রয়েছে। আগামী মৌসুমগুলোতে যাতে পানগাছ রোগমুক্ত হয় সেজন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। চাষিরা বলছেন এ মৌসুমে পানচাষের খরচ উঠবে না। কৃষি বিভাগ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করা দরকার। নইলে চাষিরা পানচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

যদিও জানা যায়, অনেক চাষি এরই মধ্যে পানের বদলে অন্য ফসল ফলানোর কথা ভাবছেন। তাদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পানচাষে সহযোগিতা ও উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। এজন্য চাষিদের ভর্তুকি দেওয়া দরকার। যেহেতু পানের বাজার ভালো, তাই চাষিদের পানচাষে আগ্রহী থাকার বিষয়ে পরামর্শ এবং বিশেষভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।   

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //