তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন

বাসা বদলাচ্ছেন বুঝি? বললেন, ‘নাহ, ঢাকায় ভালো লাগে না।’ কোথায় যাবেন? ‘গ্রামে যাব, একেবারে।’ ‘ভালো লাগে না’ বলেই কি ঢাকা ছাড়ছেন? কোনো উত্তর দিলেন না ওই নারী। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোরী মেয়েটি বলে ‘ঢাকায় ম্যালা খরচ।’ ...‘লাভ কি ঢাকায় থেকে? সারাটা মাস দুশ্চিন্তায় থাকা লাগে।’ ... কিন্তু এখন কোনো দিক কুলাতে পারি না, খাবার-দাবারও হিসাব করে খেতে হয়। সবকিছুর দাম বেশি। আর কতো কষ্ট করে মানুষ?’

১৯ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এ রকম একটি বাস্তব ঘটনা প্রকাশ হয়েছে। গল্পটি অনেকটা এ রকম- বাবা-মাসহ সাত জনের পরিবার। দুই মেয়ে গার্মেন্টসে কাজ করত। তাদের মাসিক আয় ছিল পঁচিশ হাজার টাকা। এ দিয়ে কোনোভাবে সংসার চলছিল। আড়াই বছর আগে শুরু হওয়া করোনা ছিল দুই বছর। এরপর গত মার্চ থেকে শুরু হয়েছে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ।

এ অবস্থায় তারা কোনোভাবে সংসার চালালেও অনেক ধার করতে হতো। গত মাসে তারা পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার করেছে। এর পরও স্ত্রীর অসুখের চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না লোকটি। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বহুগুণ। তাই ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। ঢাকা ছাড়ার এ রকম ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। শেষ পর্যন্ত ঢাকায় টিকতে পারছেন না বহু মানুষ। গ্রামে চলে যাচ্ছেন; কিন্তু কেনো? 

১৯ অক্টোবরই দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির একটি তালিকা প্রকাশ হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, মোটা চাল কেজিপ্রতি ১ জানুয়ারি ২০২০-এ ছিল ৩০ টাকা, ১ জানুয়ারি ২০২১-এ ৪৬ টাকা, ১ জানুয়ারি ২০২২-এ ৪৫ টাকা এবং ১৭ অক্টোবর ২০২২-এ ৪৬ টাকা। খোলা আটা একই সময়ে ২৮, ২৮, ৩৪ এবং ৫৫ টাকা। ডিম একই সময়ে ৩২, ২৮, ৩৩, ৪৫ এবং ব্রয়লার মুরগিও একই সময়ে  ১১০, ১২০ ১৮০ এবং ১৮০ টাকা।

কীভাবে সম্ভব এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা? বিশেষ করে করোনার সময় অফিস- আদালত, ব্যবসা- বাণিজ্য এবং বেতন- ভাতা বন্ধ থাকার পর কিংবা যুদ্ধের মাঝে যেখানে খাদ্যশস্য সংকটের মধ্যে পড়েছে: এ রকম অবস্থায় মানুষের আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। এমনকি গণমাধ্যম বলছে, সরকার যেখানে স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য বিতরণ করছে সেই পণ্য কেনার মতো অনেকের হাতে টাকা নেই। তারা ধার করে টিসিবির পণ্য কিনছেন। 

গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষ ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। এখানে বাসা ভাড়াও বেশি। তুলনামূলক জিনিসপত্রের দাম বেশি। তাই এখানকার খরচ জোগাতে না পেরে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তরা যদি গ্রামে গিয়ে ভালো থাকেন, তা হলে বলার কিছু নেই। গ্রামে হয়তো নিজেদের বাসায় কম খরচে একবেলা- আধাবেলা খেতে পারবেন; কিন্তু এভাবে যদি তারা চলে যেতে থাকেন, তা হলে শহরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য যে শ্রমজীবি মানুষ প্রয়োজন, তার ঘাটতি দেখা দিলে বিপদ আরও বাড়বে। তাই সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মহলের এ বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। এ নিয়ে ভাববার মতো সময় এসেছে। যে কোনোভাবেই হোক, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //