বাপেক্সের দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করতে হবে

বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাথমিক জ্বালানির ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা কমানোর বিষয়টি আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্বে থাকা একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) এ ক্ষেত্রে জরিপ আর অনুসন্ধানের কাজ পরিচালনা করে।

কিন্তু জ্বালানি সংকট নিয়ে যখন সরকার দিশেহারা তখনো থেমে নেই এই খাতে দুর্নীতি। বাপেক্সের একটি অনুসন্ধান প্রকল্পে ধরা পড়েছে সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতি। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ফল পুরো জ্বালানি খাতকেই টানতে হয় লম্বা সময় ধরে। তাই এই বিষয়গুলোর সমাধানে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আমাদের সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয়, সেখানেই যদি এমন দুর্নীতি থাকে আমরা আরও সংকটে পড়ে যাব। বাপেক্স দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে সামনে গ্যাস সংকট প্রকট হবে।

জানা গেছে, প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত বছর মেয়াদি থ্রিডি সিসমিক প্রজেক্ট অব বাপেক্স প্রকল্পটি ২০১৯ সালে শেষ হয়। এরপরই এ প্রকল্পে নানা অনিয়ম ধরা পড়ে। দেখা যায়, নিয়মানুযায়ী বছর বছর ইনভেন্টরি বা প্রকল্পের সম্পদের হিসাব দেওয়ার কথা থাকলেও সে রিপোর্ট কখনো দেওয়া হয়নি। এমনকি খরচের আর্থিক প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি সময়জুড়ে।

ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেশিরভাগই সদস্য তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খণ্ডন করতে পারেননি। নিজেদের পক্ষে কোনো যুক্তিও দেখাতে পারেননি দুদকে। দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নন, এসব ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছে কয়েকটি প্রভাবশালী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও। নাম আছে কয়েকটি আউটসোর্সিং কোম্পানিরও।

দেশের জ্বালানি সংকটের সময় বাপেক্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু যে সংস্থাটির উপর দেশবাসীর এত প্রত্যাশা, সেই সংস্থাটির দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েই গেছে। বর্তমান ডলার সংকটের সময়ে জ্বালানি সমস্যা মোকাবিলার মতো প্রয়োজনীয় অর্থের জোগানও অনিশ্চিত।

এইসব প্রেক্ষাপটে বাপেক্সের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার দুর্নীতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ কাজে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল, সবাইকে যথাযথ আইনের আওতায় আনতে হবে। বাপেক্সের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বর্তমান বাস্তবতায় জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। নইলে জ্বালানি সংকটের কারণে আমাদের বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //