শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধি: রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি

বাংলাদেশ তার নাগরিকের শিক্ষার অধিকারের প্রশ্নে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শুধু তাই নয়, সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষার সামগ্রিক ব্যয়ভার নির্বাহ করতেও অঙ্গীকারাবদ্ধ।

কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৫৫ শতাংশ শিশু প্রাক-প্রাথমিক স্তরে বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে থাকে। প্রাথমিক স্তরে মোট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হার ২২ শতাংশ; মাধ্যমিক পর্যায়ে এই হার ৯৪ শতাংশ, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। 

একদিকে যথাযথ প্রশিক্ষিত, মানসম্মত শিক্ষকের অভাব, অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যথেচ্ছ টিউশন ফি আদায়, কোচিং ও ভর্তি বাণিজ্যসহ নানামুখী অর্থনৈতিক চাপে পিষ্ট হচ্ছে দেশের প্রায় সব শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এই তিন মাস যেসব অভিভাবকের সন্তানরা বেসরকারি স্কুলগুলোতে পড়ে তাদের শিক্ষা খাতে ব্যয়ের বোঝা দ্বিগুণ, তিনগুণ বেড়ে যায়। প্রতিটি বেসরকারি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীকে নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাসের বেতনসহ পরীক্ষার ফি, কোর্স ফি, অন্যান্য বকেয়া নানা ফি, ক্লাস পার্টি ফি, পুনরায় নতুন ক্লাসে ভর্তি ফি ইত্যাদি বাবদ একটা বড় অঙ্কের টাকা স্কুলে জমা দিতে হয়।

ভোগ্যপণ্যমূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাগজসহ সব শিক্ষা উপকরণের দাম। সরকার বিনামূল্যে প্রাথমিক, সুলভ মূল্যে মাধ্যমিক এবং মেধাবীদের জন্য বৈষম্যহীনভাবে উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বৈষম্য ও বাণিজ্যিক প্রবণতা রোধ ও শিক্ষার ন্যূনতম মান নিশ্চিত করার মতো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে নামি-দামি স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়বৃদ্ধির প্রবণতা এখন এমপিওভুক্ত সাধারণ কলেজগুলোতেও দেখা যাচ্ছে। 

সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা ও আয় হ্রাসের বিপরীতে মূল্যস্ফীতির এই সময়ে শিক্ষার ব্যয়বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের শিক্ষার অধিকার পূরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক পরিবারের পক্ষে এই খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ায় বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। সম্প্রতি মালালা ফাউন্ডেশনের এক জরিপ রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার শতকরা ৭৫ ভাগ। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ও শিক্ষা সংকোচন রোধ ও মানবৃদ্ধির জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আড়াই শতাংশের কম, যা জাতিসংঘের সুপারিশ করা ৪ শতাংশ সীমার অনেক নিচে। এ অবস্থায় শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি শিক্ষা খাতে বৈষম্য, লাগামহীন দুর্নীতি, মানহীনতা ও বাণিজ্যিক প্রবণতা রোধে এখনই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //