নির্ভুল বই প্রকাশে চাই শক্ত আইনি কাঠামো

বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই বিতরণে বাংলাদেশ নতুন রেকর্ড গড়েছিল। কিন্তু সেই অর্জন এ বছর অনেকটাই ম্লান। প্রতিবছর দিনটিতে পুরো দেশ মেতে ওঠে বই উৎসবে। শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই মানেই উচ্ছ্বাস, নতুন ঘ্রাণ, অসীম আনন্দ। কিন্তু এবার সেই আনন্দ স্বচ্ছন্দভাবে পালন হয়নি।

অনেক শিক্ষার্থীকেই এবার বাড়ি ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। স্কুল থেকে আগের দিন ফোন করে জানানো হয়েছিল স্কুলে এসে বই উৎসবে যোগ দিতে, কিন্তু পরে তাদের অনেককেই ফিরতে হয়েছে ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে। অথচ করোনা হানা দেওয়ার আগে বছরের এই সময়টাতে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় শতভাগ বই পৌঁছে যেত উপজেলা পর্যায়ে। কিন্তু এবার শুধু যে বই পাওয়া নিয়ে অভিযোগ রয়েছে তা নয়, বরং পাঠ্যপুস্তকে ভুলভ্রান্তি এবং ছাপার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ২৪৫টি পাঠ্যবই বিতরণ করার কথা। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ৬৬ লাখ ২৯ হাজার ৮৪টি বই রয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির মোট ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৭টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। 

কিন্তু বই ছাপার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রায় ২৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ১৯ শতাংশের মতো বই ছাপাই হয়নি। মাধ্যমিকের সব বই পেতে এই মাস পুরোটাই লেগে যেতে পারে। আর প্রাথমিকের সব বই পেতে কমপক্ষে ২০ জানুয়ারি বা আরও বেশি লাগতে পারে।

বই ছাপার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নানা জটিলতায় বই ছাপতে এবার দেরি হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বই পেতে তড়িঘড়ি করায় কাঙ্ক্ষিত মান বজায় রাখা যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) লক্ষ্য ছিল, যে কোনোভাবে নতুন শিক্ষাবর্ষে বই উৎসব সফল করা। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে মানসম্মত বইয়ের প্রসঙ্গে ছাড় দিতে হয়েছে। এ বছর বই প্রকাশের কার্যাদেশ দেওয়া থেকে প্রতিটি পর্যায়ের কাজ শুরুতেই দেরি করা হয়েছিল। আগামী বছর যাতে একই ভুল না হয় সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে এখনই।

প্রতিবছরই বিনামূল্যের বই বিতরণের পর নানা অসঙ্গতি ও ভুলের প্রসঙ্গ আসে। এবারও অসংখ্য ভুল পাওয়া গেছে নতুন বইয়ে। এমনকি গতবার থাকা কোনো কোনো ভুল এবারও রয়ে গেছে। এর আগে ২০২১ সালে পাঠ্যবইয়ের ভুল সংশোধনে হস্তক্ষেপ করতে হয় হাইকোর্টকে। তখন এনসিটিবি জানায়, আগামীতে এমন ভুল আর হবে না। সেসময় ভুল না হওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রীও। এরপর ২০২২ সালে বিতরণ করা নতুন বইয়েও অন্তত ৩০টির বেশি ভুল খুঁজে বের করেছিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। এবারও বন্ধ হয়নি ভুল। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো যথেষ্ট সচেতন নয়। 

এভাবে নিয়মিত পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হলে তা নতুন প্রজন্মের জন্য গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলাই বাহুল্য। যার জের একজন শিক্ষার্থীকে বহন করতে হবে বছরের পর বছর। তাই এ বিষয়ে শক্ত আইনি কাঠামো থাকা দরকার। তাহলে লেখক, প্রকাশক থেকে সবাই শুরুতেই সতর্ক হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //