ঢাকার বায়ুদূষণ

উচ্চ আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করুন

গত কয়েক বছর ধরে উচ্চ মাত্রার বায়ুদূষণ সমস্যায় ধুঁকছে দেশ। গত জানুয়ারি মাসের প্রায় প্রতিটি দিন বিশ্বের দূষিত বায়ুর তালিকায় ঢাকা ছিল শীর্ষে। আর গত ২৬ জানুয়ারি সব রেকর্ড ভেঙে বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছিল ঢাকার বায়ুমান। যা চলছে ফেব্রুয়ারিতেও। কিন্তু তারপরও সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের তেমন কোনো কার্যকর তৎপরতা চোখে পড়েনি। 

২০২০ সালে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। কিন্তু তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে উচ্চ আদালতের এই ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। 

উল্লেখ্য, বায়ুমানের ক্ষেত্রে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স তথা একিউআইয়ের মান ৫০ পর্যন্ত হলে তাকে স্বাস্থ্যকর বায়ু বলা হয়। ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত থাকলে তা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের ধরা হয় যদিও ব্যক্তিবিশেষে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত মাত্রাকে বলা হয় অরেঞ্জ লেভেল যা কারও কারও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু ঢাকার বায়ুর মান জানুয়ারি মাসে কোনোদিনই ১৫০-এর নিচে নামেনি। অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর বায়ু পায়নি রাজধানী শহরের বাসিন্দারা।

আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাতাসে বিষাক্ত অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রো প্লাস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দূষিত বায়ু বা প্লাস্টিক কণা নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসার থেকে শুরু করে স্নায়ুজনিত নানা রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং শ্বাসজনিত অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের ২৫ শতাংশ হচ্ছে দূষিত বায়ুর কারণে। দেশে বায়ুদূষণের প্রভাবে ২০১৯ সালে অন্তত ৭৮ হাজার ১৪৫ জন মানুষের মৃত্যু এবং জিডিপির ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বলে বিশ্ব ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। তাই বায়ুদূষণ সমস্যাটিকে অধিকতর গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই।

এ ক্ষেত্রে আদালত নির্দেশিত নয় দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। ওই নির্দেশনায়- ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহন, সড়কগুলোতে পানি ছিটানো, মেগা প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ এবং কার্পেটিংসহ যেসব কাজ, তা আইনকানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করা, লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা বন্ধ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধ ইত্যাদি ছিল।

এগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে যাদের অবহেলায় আদালতের নির্দেশনা এত দিনেও বাস্তবায়িত হয়নি, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //