আবারও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি

সিস্টেম লস দূর করতে হবে

আবার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মার্চ মাসের বিদ্যুতের বিলেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

এর আগে গত জানুয়ারিতে দুই দফায় বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। যা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দুই ভাগে কার্যকর হয়। ৩০ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ এবং পাইকারি পর্যায়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। যেখানে গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেখানে ২ মাসের ব্যবধানে ৩ দফায় এই দাম বাড়ানো বিস্ময়কর ।

এত দিন দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানির ব্যবস্থা করত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। কিন্তু আইন সংশোধন করে এ ক্ষমতা হাতে নিয়েছে সরকার। এরপর গত ১২ জানুয়ারি, প্রথমবারের মতো সরকার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে দাম বৃদ্ধি করে। গণশুনানি না করে একতরফাভাবে দাম বাড়ানোর ফলে দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতা আর থাকল না বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ শুনানি হলে দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় এবং নানা দুর্নীতি, অনিয়ম ও কোম্পানির অদক্ষতার বিষয়গুলো সামনে আসে। এখন যা আর হচ্ছে না। 

এমনিতেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় অবনতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর  ফলে সব জিনিসের দাম আরও বেড়ে যাবে। কারণ আমাদের দেশে  দাম ৫ টাকা বাড়লে বাজারে জিনিসপত্রের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা পুরনো। তাই আমরা মনে করি এ সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত হবে না। সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দাম না বাড়িয়ে এ খাতে ভর্তুকি বাড়ালে ভালো হতো। সেই সঙ্গে এ খাতের সিস্টেম লস দূর করার বিষয়ে মনোনিবেশ করা উচিত। 

দেশে সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ খাতের দক্ষতা বাড়েনি, দুর্নীতি বন্ধ করা যায়নি। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, অদক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, অদক্ষ ও ত্রুটিপূর্ণ সঞ্চালন লাইন, এসব সমস্যার সমাধান না করে ভোক্তার ওপর একতরফাভাবে দায় চাপানো ঠিক হবে না। 

আরেকটি বিষয় হলো, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির বড় একটি অংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও কিছু ব্যবসায়ী ভোগ করছে। যেসব কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলো আমলে নেওয়া জরুরি। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে রাষ্ট্রীয় অপচয় বন্ধ করা জরুরি। সেসব না করে সকল দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দফায় দফায় এই মুল্যবৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //