বিপজ্জনক মিথেন গ্যাস

এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে

গত ১৪ মার্চ প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটারের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী বিপজ্জনক মিথেন গ্যাসে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। বিশ্বের ৬১টি শহরের ওপর ওই গবেষণাটি করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে মিথেন নিঃসরণকারী শীর্ষ দেশগুলোর তালিকার ১৩তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

প্যারিসভিত্তিক কেয়রোজ এসওএস নামের প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। সেসময় পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ব্লুমবার্গকে বলেছিলেন, সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। কিন্তু দুঃখজনক হলো, সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে অবস্থার আরও অবনতিই লক্ষণীয়। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে ২১ দশমিক ১ পিপিবি। যা এখনো বেড়েই চলেছে।

এত দিন বিশ্বে মিথেন গ্যাসের প্রধান উৎস হিসেবে মূলত দায়ী করা হতো কৃষিকাজ ও গ্রামীণ জলাভূমিগুলোকে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় বিশ্বের ৬১টি শহরে বিভিন্ন মাত্রায় মিথেন গ্যাস সৃষ্টির পেছনে গ্যাস-সংযোগের ছিদ্র, বর্জ্য ও বর্জ্যমিশ্রিত পানির ভূমিকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মিথেন গ্যাসের এসব উৎস শহরের বাতাসকে বিপজ্জনক করে তুলছে।

ঢাকায় মিথেন গ্যাস সৃষ্টির কারণ হিসেবে শহরের ১৩টি স্থানের বর্জ্যরে ভাগাড়ের কথা বলা হয়েছে। ওই সব ভাগাড়ে জৈব ও পলিথিন-প্লাস্টিক বর্জ্য খোলা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। এসব বর্জ্য পচে মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে। ঢাকার মোট মিথেনের ৪৭ শতাংশ সৃষ্টি হচ্ছে এই বর্জ্য থেকেই। একই সঙ্গে শহরের বেশিরভাগ জলাভূমিতে জমা হওয়া দূষিত পানি এবং নদীগুলো দূষিত হয়েও মিথেন গ্যাস সৃষ্টি করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় বেশ কয়েকটি ভবনে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গ্যাস-সংযোগের ছিদ্র দিয়ে বের হওয়া মিথেন গ্যাসের কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এই সব দুর্ঘটনা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

গবেষকরা বলছে, ঢাকার বায়ুমণ্ডলেও বিপজ্জনক ওই গ্যাসের একটি স্তর তৈরি হয়েছে। মিথেন গ্যাস তাপমাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি অক্সিজেনের পরিমাণও কমিয়ে দেয়। এতে শহরের অধিবাসীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের সমস্যা বাড়ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, বিশেষ করে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস  প্রবণ হওয়ার পরও মিথেন নিঃসরণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিজ্ঞানীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিবেশবিদদের মতে, গত ২০ বছরে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে পরিবেশের ৮০ গুণ বেশি ক্ষতি করেছে মিথেন। তাই মিথেন গ্যাসের উৎপত্তিস্থল বন্ধের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। না হলে শহরের তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে গ্যাস দুর্ঘটনার মতো ভয়ংকর সব ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের ওপর মিথেনের যে আস্তর রয়েছে, তা নিয়ে অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দিয়েছেন। নিঃসরণের সঠিক মাত্রা নির্ণয় ও উৎস শনাক্ত করা ছাড়া এ সংকট সমাধানের কোনো উপায় নেই।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //