অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান জরুরি

আবারও একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রত্যক্ষ করল দেশ। পাইকারি কাপড়ের বৃহৎ আড়ত হিসেবে পরিচিত বঙ্গবাজারে গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯টি মার্কেটের অন্তত ৫ হাজার দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। দোকান মালিক সমিতির প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।

প্রতিটি দোকানে ৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যের মালামাল ছিল। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর বিভিন্ন ব্যাংকে বড় অঙ্কের ঋণ রয়েছে বলেও জানা গেছে। ফলে সম্মিলিত ক্ষতির আকার আসলে বিশাল।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষতিগ্রস্ত চিহ্নিতকরণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর আগেও আমরা দেখেছি, একটি ঘটনা ঘটলেই তৎপর হয়ে ওঠে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রোধে দেওয়া হয় নানা সুপারিশ। কিন্তু এসব সুপারিশের কিছুই বাস্তবায়ন হয় না। এক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতার সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। যিনি দায়িত্ব পালনে দায়বদ্ধ তিনি দায়িত্বটি পালন করছেন কিনা সেটি দেখতে হবে। তাকে অবশ্যই জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। 

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হওয়া বঙ্গবাজারের ঝুঁকির কথা ৪ বছর আগে সেখানকার ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক। মার্কেটটিকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করার পর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ১০ বার নোটিশ দিলেও তারা সতর্ক হননি। এই দায় কি কেবলই ব্যবসায়ীদের? নাগরিক সুরক্ষার মৌলিক বিষয়গুলোকে ভয়ঙ্করভাবে অবজ্ঞা করে মানুষকে মৃত্যুমুখে ফেলে রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কি দায় নেই? 

শুধু এই বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটেই এর আগে কমপক্ষে তিনবার আগুন ধরেছিল। ১৯৯৫ সালে দুইবার আর ২০১৮ সালে একবার। কিন্তু তারপরও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আমাদের নাগরিক অসচেতনতা তো আছেই। কিন্তু রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে কেন বারবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে-সেটির কারণ অনুসন্ধান জরুরি। 

অস্বীকার করার উপায় নেই নিজস্ব ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এ ধরনের অঘটন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। আমাদের বড় বড় মার্কেট এবং ভবন তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থেকে, নিয়মিত দেখভাল এবং নজরদারির কোনো ব্যবস্থা নেই। বিশ্বের অগ্নিদুর্ঘটনাগুলোতে নজর দিলে দেখা যায়, নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যেখানে ভালো সেখানে ক্ষতির পরিমাণ কম। আমাদের দেশে এসব নেই বলেই অগ্নিকাণ্ড ঘটনায় মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতি বেশি। 

রাজধানী ঢাকার একেবারে কেন্দ্রে এত বড় একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বিষয়টিকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। আমরা আশা করি সরকার এই অগ্নিকাণ্ডের উৎস খুঁজে বের করবে। সেই সঙ্গে সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসা ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সহায়তা করবে। আগুনের ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসবে।  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //