অস্থিরতায় শিল্প খাত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে

বাংলাদেশে শিল্পপণ্যের উৎপাদন প্রায় তিনগুণ কমে গেছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যটি উদ্বেগজনক সন্দেহ নেই। কারণ শিল্প খাতের এই অস্থিরতার ভুক্তভোগী আসলে সাধারণ মানুষ।

শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে উৎপাদন। বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত পণ্যের দাম। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ; যার প্রভাব পড়ছে সার্বিক অর্থনীতিতে।

গত প্রায় এক বছর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে বেড়ে গেছে শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যয়। যে কারণে উৎপাদন কমে গেছে ২২টি খাতের পণ্যের ১৩টিতে। উৎপাদন কমার তালিকায় রয়েছে অনেক অত্যাবশ্যকীয় পণ্য যেমন-খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধ সামগ্রী, যেগুলো একদিকে দেশের মানুষ ভোগ করে থাকে, অন্যদিকে রপ্তানিও হয়। ফলে রপ্তানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাজারে খাদ্যসহ সংশ্লিষ্ট দেশীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে; বেড়ে গেছে দাম। 

বিশেষ করে ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় এরই মধ্যে সংকটে পড়েছে ওষুধ শিল্প, সিমেন্ট খাত, হালকা প্রকৌশল শিল্প, চামড়া শিল্প এবং মুদ্রণ শিল্প। এ কারণে রপ্তানি আয়ে এরই মধ্যে ধস নেমেছে। পাশাপাশি দিনে দিনে টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে দেশে খাদ্য, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঘন ঘন বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ছোট ছোট অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিতে ধীরগতি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমায় রাজস্ব আয়েও প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ পরিবর্তিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কঠিনভাবে  আঘাত হেনেছে। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের শিল্প খাতের এই সংকট কাটাতে সামগ্রিকভাবে আর্থিক খাতের সংস্কার ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সরকার একদিকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিচ্ছে, অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আবার টাকা পাচার যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি পাচার হওয়া টাকা ফেরতও আনতে পারছে না। এসব সংকট সমাধান করতে না পারলে রিজার্ভের সংকট রোধ করা যাবে না।

তাই সরকারের উচিত হবে আর্থিক খাতের সামগ্রিক সংস্কারের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যাতে করে মূল্যস্ফীতি, হুন্ডি ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। সেই সঙ্গে আমাদের জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয়সহ ডলার সংকট কাটিয়ে ওঠার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ নিতে হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //