দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জিনিসপত্রের দাম গত ১ বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অথচ বেতন বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় ৪ জনের একটি পরিবারের মাসিক খাবার খরচ গত ৪ বছরে বেড়েছে ৫১ শতাংশ। পুরো ১ মাস মাছ বা মাংস খাওয়া বন্ধ রাখলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটি পরিবারের খাবার বাবদ মাসিক ব্যয় কমপক্ষে ৭ হাজার ১৩১ টাকা, যা ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি।
করোনা মহামারি, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমতে থাকায় পণ্য আমদানিতে খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা বেড়ে যাওয়া খরচ ‘সমন্বয়’ করেছেন। একই কারণে তেল-গ্যাসসহ জ্বালানির দাম বেড়েছে। আবার তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে সরকার। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে আবারও পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলছে চক্রাকারে।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে মূল্য বাড়লেও কোনো পণ্যের মূল্যহ্রাসের সুফল পায় না দেশের মানুষ। গত মার্চে প্রধান আটটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিমূল্য ও খুচরা বাজার তুলনা করে প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় আটটি পণ্যের দাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময়কার তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও দেশের বাজারে তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। পেঁয়াজ কিংবা সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে উল্টো বেড়েছে। চিনির দাম বিশ্ববাজারে যা বেড়েছে, দেশে বেড়েছে তার দ্বিগুণ। ডালের দাম বিশ্ববাজারে যে হারে কমেছে, দেশে সে হারে কমেনি। এসব বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির নামে জনগণের অর্থ লুণ্ঠন বন্ধ হবে না।
মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজির কারণেও নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। নানা ধরনের স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও গোষ্ঠীস্বার্থের কারণে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এমনকি তেল-গ্যাসের মতো যেসব খাত সরকারের নিজের নিয়ন্ত্রণে, সেসব খাতেও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যহ্রাসের সুবিধা জনগণকে দেওয়া হচ্ছে না।
কাজেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে আমাদের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি উদ্যোগ নেওয়া দরকার। স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ হিসেবে সবার আগে প্রান্তিক মানুষের জন্য কম দামে নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে, ম্যাক্রো ইকোনমি আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমদানি বা উৎপাদন থেকে ক্রেতার হাত পর্যন্ত পণ্য পৌঁছাতে নানাভাবে বাজারে যে কারসাজি হচ্ছে, সেখানে শক্ত নজরদারি প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh