বিশ্ব ও উপমহাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতি

বাংলাদেশের নির্বাচন

বিশ্ব ও উপমহাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতি উত্তাল-জটিল-কঠিন অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে জনগণ আশা করেছিল যে, বিশ্ব রাজনীতিতে শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং অর্থনীতি দ্রুতই পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে।

কিন্তু আধুনিক কালের অর্থনীতি-রাজনীতির আন্তঃসম্পর্ক বিবেচনায় নিলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক সংকটকে গভীর থেকে গভীরতর করে তোলে। তাতে অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়ে এবং দুই সংকট মিলে অস্থিরতা-অনিশ্চয়তাকে গভীর ও তীব্র করে তোলে। এমনকি বিশ্ব রাজনীতি ও মানচিত্রের পরিবর্তনও ঘটে।

অষ্টাদশ শতকের ফ্রান্স বিপ্লব ও ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক বিপ্লব; ঊনবিংশ শতকের জুলাই বিপ্লব, প্যারি কমিউন প্রতিষ্ঠা, বিংশ শতকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার পতন প্রভৃতি বিবেচনায় নিলে এমনটা প্রতীয়মান হয়, অর্থনৈতিক সংকটের পিছুপিছুই আসে রাজনৈতিক সংকট। শেষ বিচারে একদিকে জনগণের দুঃখ-কষ্ট, মৃত্যু-ধ্বংস আর অন্যদিকে মানুষের আশা-নিরাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার প্রস্থান ও তালেবানের উত্থান, পূর্ব লাদাখে চীন-ভারত যুদ্ধ, দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক উত্তেজনা, হংকং ও তাইওয়ান নিয়ে টানাপড়েন প্রভৃতি থেকে ধারণা করা গিয়েছিল যুদ্ধ হয়তোবা এশিয়াকে ঘিরে ধরবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপ ছিল শান্তির দ্বীপ। যুদ্ধের ভয়াবহতার অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে ইউরোপে যুদ্ধ বাধবে-এমনটা কল্পনাও করা যায়নি। রাশিয়া নিজেকে নিয়ে আছে এবং থাকবে বলেই ভাবা হয়েছিল।

কিন্তু ইউরোপই আবার বিশ্বকে যুদ্ধের বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আঞ্চলিক বা সীমিত যুদ্ধ। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সারা বিশ্বই জড়িয়ে গেছে। ‘পারমাণবিক অস্ত্রই এখনো ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে। তাতে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ছে না। যদিও মাঝে মাঝে তা নিয়েও হুমকিধমকি শোনা যাচ্ছে।

তবে সৈন্য-অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ সীমিত থাকলেও যুদ্ধের নতুন রূপ একবিংশ শতক প্রত্যক্ষ করছে, তা হচ্ছে বাণিজ্য যুদ্ধ। এই যুদ্ধে সমগ্র বিশ্বই আক্রান্ত। যুদ্ধ কখন শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না। সম্প্রতি জি-৭ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরাস বলেছেন, জাতিসংঘ ব্যর্থ। নিরাপত্তা পরিষদ ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে। 

বিশ্ব পরিমÐলে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমেই তীব্র ও গভীর হচ্ছে, উপমহাদেশের দেশগুলোও অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সংকটে কমবেশি জড়িয়ে পড়ছে। পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। সেনা নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তানে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট কী রূপ নেবে, তা অনুমান করা অসম্ভব। অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে আইএমএফের দুয়ারে ধরনা দিয়ে ব্যর্থ পাকিস্তান আবারও চীনের দিকে হাত বাড়াবে বলে খবরাখবর বের হচ্ছে।

সর্বোপরি রয়েছে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে চলমান বিবাদ। এতে যুক্ত থাকছে চীন। বিবাদ প্রায়ই ছোট ছোট সংঘর্ষের রূপ নেয়। ভারতের কাশ্মীরে জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না চীন। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে হয়েছে বিশাল বিক্ষোভ। এই বিবাদ কী রূপ নেবে তা বলাও কঠিন। এ অবস্থায় তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে হাবুডুবু খেতে থাকা পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও এর সমর্থিত সরকার এবং ইমরান খানের তেহেরিক-ই- ইনসাফ পার্টির মুখোমুখি অবস্থান দুই সংকটকে একাকার করে কোথায় ঠেলে নিয়ে যাবে, তা নিয়েও আগাম কিছু বলা যাবে না।

ইতোমধ্যে আইএমএফের ঋণ পেয়ে শ্রীলংকা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। তবে তাদের তিন শর্ত (কর ব্যবস্থার সংস্কার, গরিবদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ও দুর্নীতি দমন) কার্যকর করা দেশটির জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ না করার গ্যাঁড়াকলে পড়ে আছে দেশটি, দেউলিয়া হয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আশ্বস্ত করছেন এই বলে যে, পরিস্থিতির বদল হবে।

এখানেও রয়েছে রাজনীতির গভীর সংকট। বিগত বছরের মার্চে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল স্থানীয় নির্বাচন। এখন পর্যন্ত হয়নি। নির্বাচন করতে ১ হাজার কোটি রুপি লাগবে। বেতন-ভাতা, পেনশন, প্রয়োজনীয় সেবা দিতেই পারছে না সরকার। এই অবস্থায় বন্ধ করা হয়েছে নির্বাচন। বিরোধী দল অর্থনৈতিক সংকটের অজুহাতে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ ও নির্বাচন বানচাল করার অভিযোগ তুলেছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট মিলেমিশে দেশটিকে কোন দিকে ঠেলে দেয় তা বলা অসম্ভব। 

নেপালের সংকটে পড়া অর্থনীতি আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি প্রাপ্তি এবং পর্যটন বেশ কিছুটা গতিবেগ পাওয়ায় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। বৈদেশিক বিশেষত চীনের ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জ রয়েছে দেশটির সামনে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক সংকটও ক্রমে গভীর হচ্ছে। ২০২২ সালের নির্বাচন স্থিতিশীলতা দেয়নি। পার্লমেন্ট ঝুলন্ত। নেপাল কংগ্রেস সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

দ্বিতীয় দল ইউএমএল ও মাওইস্ট সেন্টার জোট বেঁধে ক্ষমতায়। মাওবাদী নেতা প্রচন্ড প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, তবে জোট সঙ্গীর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী অর্ধেক সময় তিনি থাকবেন। পরে জোটসঙ্গীর হাতে ছেড়ে দিতে হবে ক্ষমতা।

ইতোমধ্যে তাকে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভেতর দিয়ে ক্ষমতাসীন জোটে বিবাদ, বিভেদ বেড়েছে। নির্বাচনে জোট শরিক মাওইস্ট দলের প্রার্থী থাকার পরও প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ডের দল ইউএমএল কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত করেছে। ফলে ক্ষমতাসীন জোটের দুই দলের দূরত্ব বেড়েছে, সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। ইউএমএল ও নেপালি কংগ্রেস এখন জোট গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে হিন্দু সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ‘হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি’র প্রভাব বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে।

স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটানের অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমরা বলতে পারি না যে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো হুমকি নেই। আমরা কোনো সংকটের মধ্যে নেই।’ রিজার্ভ সংকট রয়েছে। কতক পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণও রয়েছে। ভুটানের রাজনৈতিক সংকট বা অস্থিরতার তেমন কোনো খবর নেই।

মালদ্বীপ নিয়ে মে মাসের প্রথম দিকে জাতীয় একটি দৈনিকে বলা হয়েছে, ‘চীন-ভারতের প্রতিযোগিতায় চিড়ে চ্যাপ্টা মালদ্বীপ।’ 

শ্রীলংকার মতো খেলাপি ঝুঁকিতে আছে দেশটি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট সালেহ্র ক্ষমতাসীন দল এডিপি ‘প্রথম ভারত’ নীতি অনুসরণ করছে। দলটি ভাঙতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। দলটির বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অপশাসনেরও অভিযোগ রয়েছে। এতে বিরোধী দল পিপিএম রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে। তবে দুর্নীতির মামলার রায়ে পড়ে দলের নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন ভোট করতে পারবেন না।

ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী দেশ। ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে অর্থনীতিতে তৃতীয় এবং অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে সম্প্রতি পঞ্চম অবস্থানে। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ধরে রাখা ভারতের অর্থনীতি তার শক্তির দিক। বিশেষভাবে যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও আমেরিকা-রাশিয়ায় ভারসাম্য বহাল রাখতে সচেষ্ট থাকছে ভারত।

আইএমএফ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম। তবে আদানি গ্রুপ নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে, পুরো অর্থনীতি হাতে গোনা কতক গোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন হচ্ছে না। মুদ্রাস্ফীতি, ভোগ নিম্নমুখী, বৈষম্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগ হার কম প্রভৃতি সমস্যা রয়েছে ভারতের।

এদিকে ২০২৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে ভারতে রাজনীতি এখন উত্তাল অবস্থায় রয়েছে। ২০২৩ সালে ছিল ১০টি বিধানসভা নির্বাচন। বিগত মার্চে ভারতে তিনটি রাজ্য ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে সরকার গঠন করেছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। এ মাসে কর্ণাটকে জয় পেয়েছে জাতীয় কংগ্রেস। এর মধ্যে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতি হয়েছে উত্তপ্ত। ধর্ম ও জাতপাত সমস্যা ও অসহিষ্ণুতা ভারতের রাজনীতি-সমাজ-সংস্কৃতিতে গভীর ক্ষত করে চলেছে। গণতন্ত্র ও ভোট প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেওয়ায় রাজনৈতিক সংকটের ঝুঁকি মোকাবিলার দিক থেকেও ভারত সুবিধা পাচ্ছে। তবে ভারতের পাকিস্তান ও চীন সমস্যা তো রয়েছেই। 

বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি বিবেচনায় নিতে হলে বিশ্ব ও উপমহাদেশের উল্লিখিত অর্থনীতি ও রাজনীতি বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ বিশ্ব ও উপমহাদেশ থেকে আমরা নিজেদের পৃথক করতে পারি না। এরই মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ক্রমেই সামনে চলে আসছে। ধারাবাহিকভাবে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর সরকারি দল আওয়ামী লীগকে ৭/৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনে অবতীর্ণ হতে হবে।

একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, প্রধান বিরোধী দলের দুই নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও হাওয়া ভবন খ্যাত তারেক জিয়াকে এবারেও থাকতে হবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে। ২০০৮ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ব্যাপক সমালোচনা ও গণবিচ্ছিন্নতার মধ্যে নির্বাচনে ভূমিধস পরাজিত হয়েছিল। ২০১৫ সালে ওই জোট নির্বাচন বয়কট করে অগ্নিসন্ত্রাসের দিকে যায় এবং নির্বাচন বয়কট করে। তাতে দলটির গণবিচ্ছিন্নতা চরমে ওঠে।

ওই অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৮ সালে সংলাপের কৌশল নিয়ে নির্বাচনে যোগ দেয় বিএনপি। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে যে যতটুকুই পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা করুন না কেন, মূল নেতা বা ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী প্রজেক্ট করতে না পারা, একদিকে ড. কামাল আর অন্যদিকে জামায়াতকে নিয়ে জোট করে দুই নৌকায় পা রাখা, মনোনয়ন নিয়ে নয়-ছয় করে তৃণমূলে দলের বিভেদ উসকে দেওয়া প্রভৃতি কারণে দল যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থায় ছিল না, তা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। ইতোমধ্যে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে দলটি পড়েছে আরও বিচ্ছিন্নতার মধ্যে।

স্বভাবিকভাবে অভিজ্ঞতা বিবেচনায় দলটি বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে জনগণের মধ্যে যেতে চাইবে নির্বাচনের আগে। আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে চাইবে। তবে বিএনপিকে স্মরণে রাখতে হবে যে, দুই উপায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে পারে দলটি।

প্রথমত অতীতের মতো আন্দোলন করে সংবিধান বহির্ভূত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো; দ্বিতীয়ত বর্তমান সংসদ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়িত করা। দ্বিতীয়টা অসম্ভব হওয়ায় প্রথমটাই বিএনপির একমাত্র অপশন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির বিষয়টিও সামনে আনা হচ্ছে। সর্বোপরি বিদেশিদের কাছে দলটি ধরনা দিচ্ছে। চাতক পাখির মতো ওদিকে চেয়ে আছে।

বিএনপির এই কৌশলের বিপরীতে আওয়ামী লীগও মাঠে থাকছে। এ নিয়ে উত্তেজনা-অস্থিরতা-অরাজকতা আরও বাড়তে পারে। 

এসব বাড়লে সরকারি দলের লাভ নাকি ক্ষতি তা বলা কঠিন। তবে অর্থনীতি নিয়ে জনগণ শঙ্কিত থাকছে। আইএফএমের ঋণ পাওয়ার পর জনগণ মনে করেছিল, অর্থনীতিতে চলমান সমস্যাকে কাটিয়ে উঠতে সহজেই সক্ষম হবে দেশ। কিন্তু র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইতোমধ্যে আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা ওঠায় জনমনে শঙ্কা বাড়ছে।

ইতিপূর্বে আমেরিকা গণতান্ত্রিক সম্মেলনেও বাংলাদেশকে ডাকেনি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সরকার যে ভারসাম্যমূলক নীতি নিয়ে সুকৌশলে চলছিল, তাতে অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জনমনে ধারণা ও শঙ্কা বাড়ছে। বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নাক গলানোর আমেরিকার ক্ষমতাকে একেবারেই ছোট করে দেখছে না জনগণ। 

জিনিসপত্রের দাম বাড়ছেই। সম্প্রতি ‘মন্ত্রীদের মধ্যে একটা সিন্ডিকেট রয়েছে’, ‘বাজারে গিয়ে মানুষ কাঁদছে’ এমন কথা বলেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদার। পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেছেন, ‘হাওরে সড়ক বনিয়ে নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছি।’ এসব কথাবার্তা সরকারের কর্মকাণ্ড যেমন বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের ভেতরে যে অস্থিরতা রয়েছে, তা সহজেই অনুধাবন করা যাচ্ছে। দলের বিভিন্ন স্তরে বিভেদ ও দলাদলিও সুস্পষ্ট। 

উল্লিখিত অবস্থায় দেশের অর্থনীতি- রাজনীতি কী রূপ নেয়, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় কি না, কীভাবে অগ্রসর হয়, নির্বাচন সামনে রেখে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে। তবে বিশ্ব ও উপমহাদেশের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সংকট যদি আরও গভীর ও বিস্তৃত হয়, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি-রাজনীতিতে যে এর প্রভাব তীব্রতর ও গভীরতর হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কলাম লেখক, রাজনীতিক

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //