রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোকসান

আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোকসান যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সরকার এসব লোকসানের বোঝা বহন করেই চলেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার সাম্প্রতিক এক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় ১০ করপোরেশনের লোকসানের পরিমাণ ২০ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের, ৭ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ৬ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন বা টিসিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৩০টি করপোরেশনের মধ্যে ১৮টির কাছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ রয়েছে ৫৯ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।

অথচ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। বড় বড় কয়লা খনি, তেল উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্বর্ণ, রৌপ্যসহ নানা খনিজ পদার্থ আবিষ্কার, উত্তোলন ও বিক্রয় সরকারিভাবেই হচ্ছে সেসব দেশে। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক চেষ্টা করেও সরকার পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানাগুলো খুব কমই লাভের মুখ দেখতে পেয়েছে। সরকার পরিচালিত রেল, বিমান, নৌ-যান আজ পর্যন্ত লোকসান ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। এমনকি বাজারে সরকারি চিনিকলগুলোয় উৎপাদিত চিনির ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও এটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।

এর পেছনে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাব, কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় ট্রেড ইউনিয়নের হস্তক্ষেপ, অধিক জনবল নিয়োগ, ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে ব্যর্থতা এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় এসব বিষয়ও দায়ী। ক্ষমতার অপব্যবহার, ভুয়া বিল-ভাউচারসহ বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির নিত্যনতুন কৌশল আবিষ্কার করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে রীতিমতো দুর্নীতির উর্বর ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। 

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকলেও লোকসানের কারণে এগুলোর বেশিরভাগই এখন সরকারের বোঝায় পরিণত হয়েছে। এ খাতে ব্যাপক অস্বচ্ছতা ও চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি খাতের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা দরকার। নিজেরা আয় করে নিজেরা চলতে হবে। যারা পারবে না, সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এ বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে নিয়মিত অডিট হয় না। নিয়ম অনুযায়ী, অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান তা জমা দেয় না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বাহুল্য ব্যয় করে। উদ্বৃত্ত জনবলও আছে। স্বচ্ছতা না থাকার কারণে আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তাই সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করতে হলে সরকারকে দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করতে হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //