জি-২০ সম্মেলন এবং বাংলাদেশের সাফল্য

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সম্প্রতি শেষ হলো বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর ফোরাম ‘জি-২০’ বা ‘গ্রুপ অব টোয়েন্টি’র শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনে একটি সর্বসম্মত ঘোষণা প্রণয়ন হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় বিশ্ব অর্থনীতির স্বার্থে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এবারের জি-২০ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে জি-২০ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে। যা আমাদের জন্য একটি সম্মানের বিষয়। তাছাড়া এ জোটে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যেহেতু বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগের সম্পর্ক রয়েছে; তাই একে আরও জোরদার করার প্রয়োজনে এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়া ও তাতে যোগদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতার তাগিদসহ বিশ্ব শান্তি ও সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। 

জি-২০ একটি বহুপাক্ষিক জোট। ফলে এখানে আলোচনাগুলো বহুপাক্ষিকভাবে হয়ে থাকে। কিন্তু সম্মেলনের বাইরেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ রয়েছে। ফলে দেখা গেছে এ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের বাইরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও একান্ত বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন দক্ষিণ কোরিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে। সম্মেলনের শেষদিনে বৈঠক করেছেন সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে। এছাড়াও সম্মেলনে অংশ নেওয়া অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে যোগ দিতে আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একান্ত সৌহার্দমূলক পরিবেশে কথা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট মোবাইল ফোন দিয়ে সেলফি তোলেন প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে। দুটো দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতভিন্নতা থাকলেও তারা উভয়ই সহযোগিতার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ইতিবাচকভাবে ইচ্ছুক তারই বহির্প্রকাশ ঘটেছে এই ঘটনায়। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গত এক দশকে বাংলাদেশের যে ব্যাপক অর্থনৈতিক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে এবং তার সঙ্গে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে জোরালো ভূমিকা রাখছে তার একটি স্বীকৃতি আমরা এসব ঘটনায় দেখতে পাচ্ছি। এমনকি বাংলাদেশ যে ইন্দোপ্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করেছে সেই আউটলুকের কিছু বিষয়ও জি-২০ সামিট এবং ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ঘোষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি। ইন্দোপ্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশ যা বলেছে অন্যরাও সেই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

সার্বিকভাবে বললে এ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের অগ্রগতি। এর আগে ব্রিকস ও এবার জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো এবং তাতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব নতুন করে সামনে এসেছে। এই আগ্রহ ধরে রাখতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। সব দিক থেকেই বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে। একে বাংলাদেশ কীভাবে কাজে লাগাবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //