কমছে প্রবাসী আয়: ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি

রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো কোনো দিক নয়, বরং অর্থনৈতিক ঝুঁকি অব্যাহত থাকার একটি সংকেত। অথচ এটাই এই মুহূর্তে আমাদের দেশের বাস্তবতা। কারণ গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় এবার এসেছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। এই মাসে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার; যা নিকট অতীতের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের এপ্রিলে করোনা মহামারির সময়ে দেশে এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। যদিও পরবর্তী সময় মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়লেও থেমে থাকেনি রেমিট্যান্স প্রবাহ। কিন্তু বর্তমানের এই অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে প্রবাসী আয় কমে যাওয়া আশঙ্কার চোখে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

তবে অবাক করা তথ্য হলো, গত আড়াই বছরে ২৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ জন বাংলাদেশি নতুন করে বিদেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়েছেন। স্বভাবতই দেশের বাইরে যখন প্রবাসী বাড়ছে, তখন রেমিট্যান্সও বাড়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে বরং দিনকে দিন প্রবাসী আয় কমে যাওয়া বিস্ময়কর।

অর্থনীতিবিদদের অভিযোগ, গত এক দশকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল নজরদারির সুযোগে একটি প্রভাবশালী মহল ঋণের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। তাছাড়া ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের হার বেশি। ফলে বৈধ পথের চেয়ে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। যে কারণে প্রবাসীরা যে ডলার পাঠাচ্ছেন, তা আর দেশে আসছে না। পাচারকারীরা দেশে টাকায় অর্থ পরিশোধ করছে, আর বিদেশ থেকে ডলার সংগ্রহ করছে। 

তবে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া অবশ্য গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে। ওই সময় আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশি দামে ডলার বেচাকেনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দেশি-বিদেশি ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণও করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব তৎপরতার মুখেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক ধাক্কায় প্রায় ৫০ কোটি ডলার কমে যায়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখনই ডলারের বিনিময় হার নিয়ে কঠোর হয়েছে, তখনই বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপর্যয় দেখা গেছে।

তাই সমস্যার টেকসই সমাধান হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে হুন্ডিতে অর্থ পাঠানো, অর্থ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি, প্রণোদনা বৃদ্ধির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে। তাছাড়া আমাদের বেশিরভাগ শ্রমিকই নিম্ন আয়ের কাজ করে থাকেন। তাদের সুপ্রশিক্ষিত জনশক্তি হিসেবে রপ্তানি করতে পারলে তারা উচ্চ আয়ের পেশায় যুক্ত হতে পারবেন; যা প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //