খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: বিতরণ ও আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে

ব্যাংক খাতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি বলা হয়। দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার চাকা সচল রাখতে ঋণ দেওয়া এবং সময়মতো সে ঋণ আদায় করা ব্যাংকের অন্যতম কাজ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ব্যাংক খাত নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা উচ্চ খেলাপি ঋণ। 

কোনোভাবেই ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের লাগাম টানা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। এছাড়া ১ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণ সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। 

অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টদের মতে, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, করপোরেট সুশাসনের অভাব, ঋণ পরিশোধের শিথিল নীতি প্রত্যাহার, বর্তমান ব্যবসায়িক মন্দা ও বাংলাদেশি পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম, ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট না থাকায় মূলত ঋণখেলাপিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ব্যাংক খাত। 

মহামারি করোনার প্রকোপের কারণে গ্রাহককে ঋণ শোধ না করেও ঋণখেলাপি থেকে মুক্ত রাখার সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরও ঋণের কিস্তির অর্ধেক পরিশোধে রয়েছে বিশেষ ছাড়। এমন সব সুযোগের পরও ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না গ্রাহক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঋণখেলাপিরা শাস্তির বদলে উল্টো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। বিদেশে ঋণখেলাপিদের সবকিছু কেড়ে নেওয়া হলেও এখানে হচ্ছে তার উল্টো। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকিং খাতটি শেষ হয়ে যাবে। 

তাই ব্যাংকের ভালো গ্রাহককে যেমন পুরস্কৃত করতে হবে, তেমনি খারাপ গ্রাহক তথা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদেরকে অন্যায্য সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে আইনের আওতায় আনা দরকার। কারণ দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে একের পর এক সুবিধা দেওয়ার কারণে আজকে পরিস্থিতি এই বিপর্যয়কর পর্যায়ে পৌঁছেছে।

তাই এখন সময় এসেছে, খেলাপিদের সব অন্যায্য সুবিধা বন্ধ করতে হবে। ঋণ বিতরণ ও আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে। ব্যাংক খাতের জন্য যেসব নীতিমালা, আইনকানুন, আন্তর্জাতিক রীতি আছে, সেগুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে। পাশাপাশি এর বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //