বাংলাদেশে প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর হবে বলে সরকার জানিয়েছে। প্রশ্ন হলো বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে এই মজুরি তাদের জীবনধারণের পক্ষে কতটা উপযুক্ত? যেখানে বাজারে এক কেজি চাল ৬৫ টাকা, আলু ৬০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত মাসে এক গবেষণায় দেখিয়েছে, শ্রমিকের মাসিক নিম্নতম মজুরি হওয়া দরকার ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা। সেখানে ন্যূনতম এই মজুরি শ্রমিকদের মেনে নেওয়ার কথা নয়। যে কারণে দেখা যাচ্ছে, শ্রমিক সংগঠনগুলো এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এই সময়ের মধ্যে নানা ঝড়ঝাপটা সামলিয়েও গত ১০ বছরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১৩০ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববাজারে গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি মার্কেট শেয়ার ছিল চীনের, ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। তার পরই ছিল বাংলাদেশের অবস্থান ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এই সময়ে রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি পোশাক খাতে নতুন বাজারও সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর মোট পোশাক রপ্তানির ১৬ শতাংশের গন্তব্য ছিল নতুন বাজার।
এ তো গেল বিশ্ববাজারে পোশাক শিল্প ব্যবসার অগ্রসরতার কথা। পাশাপাশি সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দিক থেকেও তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়ে রয়েছে। অন্য শিল্পকারখানাকে যেখানে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট কর দিতে হয়, সেখানে পোশাক কারখানার জন্য এই করের হার ১০-১২ শতাংশ। এর বাইরে এই শিল্পের জন্য নগদ সহায়তা, মূসক অব্যাহতি, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেওয়া এবং শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধাও আছে।
এ রকম নানা সুবিধা পেয়ে আসছে যে শিল্পটি, তাদের নেপথ্য কারিগর শ্রমিকদের মজুরির বেলায় দেখা গেছে ঠিক এর বিপরীত চিত্র। বিশে^র অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় তো বটেই, এমনকি দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের চেয়েও কম মজুরি দিচ্ছে শীর্ষ রপ্তানি আয়ের এই খাত। প্রত্যেকবার মজুরি বাড়ানোর সময় বিভিন্ন অজুহাতে মালিকপক্ষ কম মজুরি বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পোশাক আমদানিকারক দেশগুলোতে আইন হচ্ছে, শ্রমিকদের বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় মজুরি দিতে হবে। তাই শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির ব্যাপারে সরকার ও শিল্প মালিকদের আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, শ্রমিকরাই এই শিল্পে আয়ের অন্যতম মাধ্যম।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস হলো তৈরি পোশাক খাত। তাই কোনো কারণে এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক, তা আমরা চাই না। আমরা আশা করি তৈরি পোশাক খাতের চলমান এই সংকট থেকে উত্তরণে মালিকপক্ষ, শ্রমিক সংগঠনগুলো ও সরকার ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : পোশাক শ্রমিক সম্পাদকীয় সাম্প্রতিক দেশকাল সরকার
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh