নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির

বাজার তদারকির দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

বহুদিন ধরেই নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু তারপরও প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্য ও সেবার দাম বেড়েই চলেছে। 

সম্প্রতি নিম্নবিত্তের জীবন ধারণের অন্যতম মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ টাকা। মাঝারি ও সরু চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। বলাই বাহুল্য মাস শেষে একটি সাধারণ আয়ের পরিবারে এটি বেশ বড় অঙ্কের চাপ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে কয়েক দিন আগেই চিনির আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। কাজেই এখন বাজারে চিনির দাম কমার কথা, কিন্তু উলটো পণ্যটির দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি চিনি এখন কিনতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে, কিছুদিন আগেও যা ছিল ১৩৫-১৪০ টাকা। এমনকি কোথাও কোথাও বাজার থেকেই চিনি উধাও হয়ে গেছে। দাম না কমে কেন উলটো দাম বাড়ছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। 

আমদানিনির্ভর সকল নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য আমদানিকারকরা যথারীতি বিশ্ববাজারে পণ্য এবং ডলারের উচ্চমূল্যের অজুহাত দিচ্ছেন। কিন্তু দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যও কি সাধারণের নাগালের ভেতর? কিছুদিন হলো শীতের সবজি বাজারে এসেছে; জানা গেছে, এবার উৎপাদন বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। কিন্তু সবজি প্রান্তিক কৃষকের মাঠ থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছতে সড়কে চাঁদাবাজিসহ কয়েকবার হাত বদল হচ্ছে। এসব কারণে বাজারে ভোক্তাকে এখনো চড়া দামেই সবজি কিনতে হচ্ছে। যদিও এই মূল্য প্রান্তিক কৃষক পাচ্ছেন না। অন্যান্য কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ সর্বত্র ভারী হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পকেট। 

চিনি, ভোজ্যতেল-এসব পণ্য নিয়ে অতীতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বারবার কারসাজি করলেও কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কয়েক দিন পরপর অসাধু ব্যবসায়ীরা একেকটি পণ্যের বাজার অস্থির করে তুললেও এ ক্ষেত্রে বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর ভূমিকা হতাশাজনক। দেশে বেশ কয়েকটি চিনিকল রয়েছে। এগুলো সচল থাকলে চিনির ওপর আমদানিনির্ভরতা কমানো যেত। কিন্তু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় দেশের চিনিকলগুলো পরিণত হয়েছে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে। ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে অনেক চিনিকলে। অথচ বাজারে দেশি আখের চিনির চাহিদা ব্যাপক। ঠিকমতো সরবরাহ না থাকায় ক্রেতারা তা পাচ্ছেন না। অথচ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিভিন্ন মিলে বিপুল পরিমাণ দেশি চিনি অবিক্রীত রয়েছে। এই সব ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা রয়েছে, তা বের করা জরুরি।

বস্তুত বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যের অবসান না হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে না। সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। বিকল্প উপায়ে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার অবসানে বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কিনা সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //