ব্যাংকিং খাতের সংকট উত্তরণে খেলাপি ঋণ কমান

বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা ব্যাংকিং খাতের অবনতির মূল কারণ হিসেবে খেলাপি ঋণকেই চিহ্নিত করছেন অর্থনীতিবিদরা। খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ প্রায় সাত গুণ বেড়েছে। 

বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় ২০০৯ সালে দেশে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খেলাপি ঋণ এখন বেড়ে এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, এর পরিমাণ আরও বেশি। কারণ সন্দেহজনক ঋণ, আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণ, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণকেও তারা খেলাপি দেখানোর পক্ষে।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাদায়ী ঋণের একটি বড় কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই না করেই নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে বড় আকারে ঋণ অনুমোদন দেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক বহু আগে থেকেই পরামর্শ দিয়ে আসছে, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক যেন আরও সতর্ক হয় এবং নজরদারি আরও বাড়ায়। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের চিত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। বরং প্রতিবছর খেলাপির সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৩ সালের সমঝোতা স্মারকের আওতায় ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল, সেগুলোর কিছুই অর্জন হয়নি। বরং খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। 

বিশ্বের অনেক দেশে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। চীন ও ভিয়েতনামে ঋণখেলাপি ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের জন্য মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে। সেখানে ঋণখেলাপিরা বিমান বা রেলের টিকিট কিনতে পারেন না, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন না। সিঙ্গাপুরে ঋণখেলাপির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। একই রকম আইন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ আদায়ে কিছু আইন থাকলেও এসব প্রয়োগের অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার বদলে একের পর এক নানান সুবিধা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে ২০০৩ সালে খেলাপি ঋণ আদায় বা এ জাতীয় বিষয়ে অর্থ ঋণ আদালত গঠনের পর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এতে মোট মামলা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার। এর মধ্যে অনেক মামলা বছরের পর বছর ধরে চলছে। ফলে একদিকে যেমন ঋণ আদায়ে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না, তেমনি খেলাপির সংখ্যা আরও বড় হচ্ছে। 

তাই কেবল আইন থাকলেই হবে না, প্রয়োজন এর কঠোর বাস্তবায়ন। কারণ বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করার বিকল্প নেই।

-সম্পাদকীয়; সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল (২৩ নভেম্বর, ২০২৩)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //