নতুন শিক্ষাক্রমে অসন্তোষ: প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন

নতুন কারিকুলামের শিখনপাঠ নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে অসন্তোষ। চলতি বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের তিনটি শ্রেণিতে নতুন এ কারিকুলাম চালু হলেও আগামী শিক্ষাবর্ষে আরও কয়েকটি শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হবে নতুন কারিকুলাম। কিন্তু এ নিয়ে ইতোমধ্যে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সংস্কারসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরাম। 

গতানুগতিক শিক্ষা ধারা থেকে বের হয়ে আসা ও অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা, বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে শেখার জন্য নতুন শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী একটা রূপরেখা, সন্দেহ নেই। কিন্তু একই সঙ্গে দেশের অভিভাবকদের বড় অংশ এই শিক্ষাক্রমকে কেন গ্রহণ করতে পারছেন না, তা বিবেচনায় নিয়ে এর সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। 

নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী কতটুকু শিখল, তা নিয়মিত ক্লাসে যাচাই করা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীর দুর্বলতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। এই সহযোগিতার কাজটি করবেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কিংবা বিষয়-সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি। তবে অনেক শিক্ষক এ শিক্ষাক্রম ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারছেন না বলে বিভিন্ন আলোচনা থেকে জানা যাচ্ছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হচ্ছে না, এমনকি সময়মতো শিক্ষক সহায়িকাও হাতে আসছে না বলে অভিযোগ করছেন তারা। পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে গতানুগতিক ধারার শিক্ষা কার্যক্রমই যেখানে বহুকাল ধরে ব্যাহত হয়ে আসছিল, সেখানে নতুন শিক্ষাক্রমে তা যে কঠিন হয়ে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। দেশের শহরগুলোতে অভিজ্ঞ এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষক কিছুটা থাকলেও গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তা একটি বড় সমস্যা।

তাছাড়া শিক্ষার্থীর শিখন সহায়তায় অভিভাবকদের নিয়মিত ওয়াকিবহাল থাকার দিকটি নতুন শিক্ষাক্রমের তাৎপর্যপূর্ণ দিক। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক এমন অনেক কাজ দেন যা অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। অথচ সব অভিভাবকের শিক্ষা, সচেতনতা এক নয়। এর জন্য বিদ্যালয়েও অভিভাবকদের নিয়মিত সমাবেশ প্রয়োজন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, নিয়মিত সমাবেশ হয় না বা হলেও অনেক সময় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় না। তাছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিখনসামগ্রী সংগ্রহ, তৈরি, প্রদর্শন, প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগানোর জন্য নেই কোনো নির্দিষ্ট বাজেট; যা এই নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়নকে কঠিন এবং প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। অভিভাবকরা বলছেন, শহরের সচেতন অভিভাবকরা এই শিক্ষা উপকরণের জোগান দিতে পারলেও মফস্বল এলাকার অভিভাবকরা পারছেন না। ফলে দরিদ্র পরিবারের ওপর এটি একটি বাড়তি বোঝা।

তাই নতুন শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে অভিভাবকদের আস্থা তৈরি করতে হবে। আমরা আশা করি এ জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট, অবকাঠামোগত উন্নতি এবং যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো মনোযোগ দেবেন।

-সম্পাদকীয়; সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল (৩০ নভেম্বর, ২০২৩)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //