স্বাগত-২০২৪

স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকিতে দেশ, বাড়াতে হবে খাদ্য উৎপাদন

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকিতে দেশ। গত কয়েক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যবৃদ্ধির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাদ্যদ্রব্যের দাম; যার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন জরিপ রিপোর্টে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে উঠে এসেছে দেশের মোট জনসংখ্যার ২১ দশমিক ৯১ শতাংশ মানুষ মাঝারি ধরনের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আর অতি নিরাপত্তাহীনতায় আছেন শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ মানুষ। 

অন্যদিকে বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩০ দশমিক ২ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও যেখানে তাদের বাজারের তালিকা কাটছাঁট করে আমিষের পরিমাণ কমিয়ে ফেলেছে, সেখানে নিম্নবিত্তের মানুষের কথা বলাই বাহুল্য। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো মানুষ সহনীয় মাত্রার বা মধ্যম মানের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকার অর্থ হচ্ছে এসব মানুষ খুব বেশি ক্ষুধার্ত নাও থাকতে পারেন। তবে তারা নিয়মিত পর্যাপ্ত খাবার ও পুষ্টিকর খাবার পান না। ফলে তারা অপুষ্টি ও দুর্বলতার কারণে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকিতে থাকেন। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটতে দেখা যাচ্ছে।

প্রায় প্রতিটি পেশাই কমবেশি কায়িক শ্রমনির্ভর। তাই একটি সুস্বাস্থ্য ও কর্মক্ষম জাতি গড়ে তুলতে চাইলে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। অথচ আমাদের শহরগুলোতে তো বটেই, দেশের অধিকাংশ খাবার যে গ্রামে উৎপাদন হয় সেখানকার মানুষের মধ্যেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি। 

লক্ষণীয় যে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনার সময় থেকে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি শুরু হলেও বর্তমানে তা অনেকটাই কমেছে। যেমন শ্রীলঙ্কায় গত বছর সাড়ে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। কিন্তু গত জুলাই থেকে তা আর বাড়েনি; বরং কমেছে। অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে বেড়ে নভেম্বরে সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, যা ছিল এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু খাদ্যের মূল্যস্ফীতি নয়; সার্বিক মূল্যস্ফীতির হারও বেড়েছে। গত মার্চ মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি ছিল। কিন্তু তারপরও এই সমস্যার সমাধানে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর কোনো আন্তরিক তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি।

এ অবস্থায় দেশব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি ছাড়া উপায় নেই। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। চাল ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে। যে অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে পণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ছে, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি কম দামে খাদ্যপণ্য বিক্রির আওতা বাড়ানো দরকার। কারণ স্বল্প আয় ও নিম্নমধ্যবিত্ত অনেক পরিবার এ সুবিধার বাইরে রয়েছে। 

আমরা আশা করি নতুন বছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হার কমে যাবে। দারিদ্র্য কমবে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //