সড়ক দুর্ঘটনা রোধ: সুব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর নীতি প্রণয়ন জরুরি

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেশে ৫ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ডিসেম্বরেই সড়কে ঝরেছে ৪৩৩ জনের প্রাণ, আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৯৫ জন । কিন্তু বাস্তবে আহত ও নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা।

সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার অনেকাংশেই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি বৃদ্ধি এবং জবাবদিহিতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছেই। সেই সঙ্গে চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া যানবাহন চালানোর পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়ক ও সেতুর নাজুক অবস্থাও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বহুলাংশে দায়ী। গণপরিবহনে বাড়তি যাত্রী সামাল দিতে গতিসীমার বাইরে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বেশি ট্রিপ দেওয়ার অশুভ প্রতিযোগিতা আর বাড়তি মুনাফার লোভে পরিবহন সংস্থাগুলো চালকদের অনেক বেশি সময় কাজ করতে বাধ্য করে; যা প্রকারান্তরে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সড়কে প্রাণহানি আমাদের মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপিতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থ-সামাজিক ক্ষতির হিসাব তৈরি করেছে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই)। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। আর রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি মারাত্মক দিক হচ্ছে এতে মৃত্যু বেশি শিক্ষার্থীদের। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সড়কে ১ হাজার ২৩৭ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। দিনে অন্তত তিনজন শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে সড়কে। 

এখন পর্যন্ত সড়ক পরিবহন আইন কেবল কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ, প্রভাবশালী ও সবলদের ওপর আইন প্রয়োগ করছে না পুলিশ। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ এবং আহত, অঙ্গহানি বা পঙ্গু হলে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে। যেটি পর্যাপ্ত তো নয়ই, এগুলো ঠিকমতো আদায়ও হচ্ছে না। বিআরটিএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা ১৮৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং আহতরা ১৭৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবিদার। কিন্তু নামে মাত্র ১৬২ জনকে ৭ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

তাই প্রতিদিন সড়কে মৃত্যুর যে মিছিল তা নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সুপ্রশিক্ষিত চালক, সড়কে সুব্যবস্থাপনা এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যথাযথ নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //