তীব্র গ্যাস সংকট: স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনা নিতে হবে

এবারের শীতে দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিলের পর এবারই দেশে গ্যাসের সরবরাহ সর্বনিম্ন। রান্নার কাজে যেমন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি সিএনজি, শিল্পকারখানা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নেই। যে কারণে শিল্প উৎপাদন, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প সংকটের মুখে আছে। কোনো কোনো কারখানার উৎপাদন ৩০ ভাগে নেমেছে। চট্টগ্রামে ইস্পাত, সিমেন্ট ও কাচের মতো ভারী শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের। 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে অর্থনীতির জন্য ৫টি ঝুঁকির মধ্যে জ্বালানি স্বল্পতাকে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক প্রায় ৪১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে সব বিতরণ কোম্পানি মিলে এখন গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করছে সর্বোচ্চ ২৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। গত এক মাস ধরে একদিকে আমদানি করা এলএনজির সরবরাহ যেমন কমেছে, অন্যদিকে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকেও উৎপাদন কমেছে। 

ঢাকার প্রায় সব এলাকায়ই এখন রান্নার গ্যাসের সংকট চলছে। তবে বিশেষ করে মিরপুর, কামরাঙ্গীরচর, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শান্তিনগর, মহাখালী, খিলগাঁও, গোলাপবাগসহ আরও অনেক এলাকায় এই সংকট তীব্র। এর আগে যখন গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়, বলা হয়েছিল নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়া হবে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং এই সংকট আরও বেড়েছে।

যে প্রক্রিয়ায় এই সংকট নিরসন করার চেষ্টা চলছে তাতে গ্যাস সংকট কাটবে না বলেই মত দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কারণ এর সঙ্গে যুক্তরা আমদানির ওপর জোর দিচ্ছেন। কারণ আমদানি করলে তাদের নানাবিধ সুবিধা। অথচ এই আমদানিনির্ভরতা আমাদের আপাত সমস্যার সমাধান করলেও স্থায়ী সংকটের মাধ্যমে সম্ভব নয়। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই বৈশ্বিক সংকট আমাদের দেশের সংকটকে তীব্র করে তুলতে পারে। যেমন ইউক্রেন যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি। তা ছাড়া ডলার সংকটের কারণে অতিরিক্ত আমদানি করাও সম্ভব না। আগামীতে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা এবং আমদানি করে চাহিদা পূরণ করাই হবে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ।

তাই আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে জ্বালানি খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারার মতো দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার দিকে এগোনো প্রয়োজন। আমাদের গ্যাস থাকার পরও তা উত্তোলনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আবার যে কূপগুলো আছে সেগুলোও ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। দীর্ঘ মেয়াদে সমাধানের জন্য সাগরে এবং স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলন বৃদ্ধির দিকে জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন কূপ খনন করে যেতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //