দেশের এই ক্রান্তিকালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শিক্ষক, গবেষক, আমলা, সিভিল সোসাইটির গুণীজন এবং পরিবেশবিদসহ তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মোবারকবাদ জানিয়েছে ভাসানী পরিষদ।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্র সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এবং যথাযথ সময়ে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশের তরুণ ছাত্র-জনতার হাতে গত কয়েকদিনে এক অভাবনীয় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এই বিপ্লবের ফলে ছাত্র-জনতার মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। ইতিহাসের এই যুগসন্ধিক্ষণে একটি নিরাপদ, বৈষম্যহীন এবং মানবিক সমাজ গঠনে এই সরকার কাজ করে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৈষম্য ও জুলুমের বিরুদ্ধে তরুণদের এই ঐতিহাসিক ভূমিকাকে আমরা স্যালুট জানাই। নিহত ভাই বোনদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। সব হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। সেই সাথে অভ্যুত্থানের পর লুটপাট ও হানাহানিকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, এদেশে বৈষম্য বিরোধী ও গণমানুষের রাজনীতির জন্মদাতা মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। এদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, ভাষা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, জমিদারী উচ্ছেদ আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ফারাক্কা লং মার্চে নেতৃত্ব দানের মধ্য দিয়ে তিনি সর্বোপরি একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনিই প্রথম আসসালামুয়ালাইকুম জানিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন। এজন্য তাকে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বলা হয়ে থাকে।
মওলানা ভাসানীর অনুসৃত পথ ধরে সংগ্রামী তারুণ্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। লুটপাট, হানাহানি ও সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করি ও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাই।
অতীতে যেভাবে মওলানা ভাসানীর অবদান মুছে দিতে নির্লজ্জ ও মিথ্যাচার দিয়ে ইতিহাস বিকৃতি করেছে, মওলানা ভাসানীর স্মৃতি কর্ম ধ্বংসের অপচেষ্টা করছে, তার ক্ষতি অপূরণীয়। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা নানাভাবে হেনস্থার স্বীকার হয়েছি।
বর্তমানে ছাত্র-জনতার স্পিরিটের সঙ্গে মওলানা ভাসানীর স্বপ্নের মেলবন্ধন খুঁজে পাচ্ছি। ৭২ সালের সংবিধান নিয়ে তিনিই প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন।
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর নামে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম পরিচালনার অন্তরালে মওলানা ভাসানীর সাইনবোর্ড রেখে তার মূল চেতনা ধ্বংসের অপচেষ্টা আমরা বিগত সময়ে লক্ষ্য করেছি।
বর্তমানে তারুণ্যের এই আশা জাগানিয়াকালে আমরা মওলানা ভাসানীর শিক্ষা ভাবনার আলোকে তার শেষ স্বপ্ন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গড়ে তোলার জন্য আকুল আবেদন জানাই। বাংলাদেশের একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গড়ে তুলতে পারলে মাওলানা ভাসানীর আত্মা শান্তি পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেই সাথে টাঙ্গাইলসহ সারা বাংলাদেশে মওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠানগুলোকেও যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দাবি জানাই।
ভাসানী বিদ্বেষী বিদায়ী ভিসির আমলে মওলানা ভাসানীর মাজারে প্রবেশের কড়াকড়ি আরোপ ও চারপাশের গেটগুলো বন্ধ রাখার ফলে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করছি। মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত দরবার হল, কলেজ, স্কুল, মিউজিয়াম, মুসাফিরখানা, হেফজখানা এবং তার পবিত্র মাজার এলাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত রেখে ওই স্থানকে ভাসানী কমপ্লেক্স অথবা ভাসানী চত্বর নামকরণ করার দাবি জানাচ্ছি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা উপাচার্য ও অন্যান্য প্রশাসনিক পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন তারা যেন মওলানা ভাসানীর সংগ্রামী জীবন, আধ্যাত্মিক জীবন এবং আদর্শ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত হন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি। মওলানা ভাসানী রিসার্চ সেন্টারটি আরো বেশি যুগোপযোগী ও গতিশীলায়ন এবং সপ্তাহে একাধিক ক্লাস চালু রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। সন্তোষসহ দেশে ও দেশের বাইরে সকল ভাসানী ভক্ত-অনুসারীদের এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সর্বোপরি মওলানা ভাসানীকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে ঘোষণা দেবার আহ্বান জানাচ্ছি।
সবিশেষ মওলানা ভাসানীর জন্ম জেলা সিরাজগঞ্জ ও কর্মস্থল টাঙ্গাইলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর উপর নির্মিত সেতুটিকে ভাসানী সেতু হিসেবে নামকরণের অনুরোধ জানাই। মওলানা ভাসানীর আদর্শে শোষণ ও বৈষম্যহীন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপনাদের প্রতিশ্রুত রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে আমাদের নিরলস সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। যুগ যুগ জিও তুমি মওলানা ভাসানী।
লেখক: আজাদ খান ভাসানী, সদস্য সচিব, ভাসানী পরিষদ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh