বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ তিন ধাপ পিছিয়েছে। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮১তম। তবে এ বছর ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। সূচকে এই তিন ধাপ অবনমন প্রমাণ করে দেশে ক্ষুধা নিরাময় অবস্থা একটি উদ্বেগের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববাসীর মধ্যে ক্ষুধার প্রকোপ কতখানি, তা জানতে প্রতিবছর এই বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য, অপুষ্টি সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করা, যাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। প্রতিবেদন অনুসারে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১.৯ শতাংশ অপুষ্টির শিকার এবং ২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনে পৌঁছানোর আগেই মারা যায় এবং অপুষ্টির কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর বৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়েছে। উপরন্তু পাঁচ বছরের কম বয়সী ১১ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ নষ্ট হয়ে যায় অর্থাৎ উচ্চতার অনুপাতে তাদের ওজন বাড়ছে না।
গত কয়েক বছরে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়েছে বটে, কিন্তু উন্নয়নের সুবিধা দেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছেনি। ফলে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ এখনও অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যপণ্যের মূল্য যেভাবে বেড়ে চলেছে, সেখানে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে পুষ্টিকর খাদ্য তো দূর, ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ওপর আছে অসচেতনতা। অনেক কম মূল্যের খাবারেও যে যথেষ্ট পুষ্টি রয়েছে, সেই সঙ্গে কোন খাবারের খাদ্যগুণ কীভাবে বাড়ে, অথবা নষ্ট হয়- সে সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবও যথেষ্ট। যে কারণে অনেক অবস্থাপন্ন পরিবারের নারী ও শিশুকেও অপুষ্টিতে ভুগতে দেখা যায়।
খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবেই এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে এবং প্রতিটি মানুষের সুষম খাবার নিশ্চিত করতে হবে। অপুষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা জনগোষ্ঠীকে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নের অংশীদার করতে হবে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যে কোনো উপায়ে রোধ করতে হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh