‘মব ভায়োলেন্স’ বনাম ‘ডেভিল হান্ট’

আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত এবং ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা- অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব প্রদানকারী সংগ্রামী ছাত্রসমাজ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই। সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ যারাই স্বাগত জানিয়েছেন, তাদের কাছে শেখ হাসিনার অপপ্রচার গ্রহণযোগ্য হয়নি। অপপ্রচার গ্রহণযোগ্য হলে গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে অন্তত জাতিসংঘের তৈরি নির্মোহ ও সত্যাশ্রয়ী তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হতো না। 

এদিকে অতিসম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা, অনলাইনে একটি ভাষণ দেবেন এই কথা প্রচার হলে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সেই প্রতিক্রিয়ার তাৎক্ষণিক বহিঃপ্রকাশ ঘটে ছাত্র-জনতার ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাধ্যমে। ঢাকাস্থ, প্রয়াত শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাসের সঙ্গে বিজড়িত ‘৩২ নম্বর বাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ‘সুধাসদনে’ ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের বাসভবনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং নেতানেত্রীদের ম্যুরাল ও স্মৃতিফলক গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের ঘটনা আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানকালে ঘটলেও সেটি হয়তো ‘মানানসই’ হতো। কিন্তু অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হওয়ার ছয় মাস পর দেশে একটি সরকার থাকাকালে এ ধরনের কাজ শুধু ‘বেমানান’ই নয়, বেআইনিও বটে। এসব ঘটনাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে বিবৃতি দিলেও সরকারের কোনো কোনো মহল এবং সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রসমাজের কোনো কোনো মহলকে এসব ঘটনার ইন্ধনকারী ও সহযোগিতাকারী হিসেবে দেখা গেছে। এটি খুবই দুঃখজনক।  

বলা বাহুল্য, দেশে একটি সরকার থাকতে এ ধরনের নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ড গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক চেতনার পরিপন্থী। দেশ-বিদেশে যারা গণ-অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন, তাদের কাছেও এটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। এটি গণ-অভ্যুত্থানের শত্রুদের জন্যও নতুন অপপ্রচার চালানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি রাজনীতির রণনীতিগত ও রণকৌশলগত ভুল। তা ছাড়া এতে অন্তর্বর্তী সরকার ও সংগ্রামী ছাত্রসমাজের ভাবমূর্তি যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনমনে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হয়েছে। 

শেষ কথা

তবে অন্তর্বর্তী সরকার এবং সংগ্রামী ছাত্রসমাজ অতি দ্রুত তাদের ভুলটি বুঝতে পেরে এখন যে ‘ডেভিল হান্ট’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন, সেটি বিজ্ঞোচিত এবং সর্বমহলে সমর্থনযোগ্য কাজ বলে আমরা মনে করি। এটিই হলো পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ। অন্তর্বর্তী সরকার ও সংগ্রামী ছাত্রনেতারা যে দ্রুত ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে সঠিক পথে অগ্রসর হয়েছেন, সে জন্য তাদের আমাদের অভিন্দন জানাই। 

তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, ডেভিল হান্ট অভিযানে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি (সে যে দলেরই হোক) যেন হয়রানির শিকার না হন। 

গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে অনুশোচনার একটি পথ সর্বক্ষেত্রেই এবং সর্বদাই খোলা রাখা জরুরি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh